হাসিনার প্রস্থানের পর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু -ব্লুমবার্গের নিবন্ধ
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানির উৎস বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়। কিন্তু ভট্টাচার্য বলছেন, ‘হাসিনার প্রশাসন সম্ভবত রপ্তানি, মুদ্রাস্ফীতি এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে।’
হাসিনা, যিনি গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেন এবং এই মাসে ভারতে পালিয়ে যান। ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮.৩৬ ট্রিলিয়ন টাকা দেশি ও বিদেশি ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। যা তিন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সমান।
ভট্টাচার্য বাংলাদেশের জন্য তিনটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেছেন: সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি। তিনি বলছেন, ‘গত কয়েক বছরে স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়েছে এবং হাসিনা এর জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। যদিও আমরা মনে করি এটা যুক্তিযুক্ত নয়’।
বাংলাদেশের ট্যাক্স -টু-জিডিপি অনুপাত ৭.৩%, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন একটি। এই অনুপাত ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে ৮.৮% এ উন্নীত হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘সবথেকে বড় বিভ্রান্তির জায়গা হলো আপনার ৫% থেকে ৭% স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি রয়েছে এবং আপনি কর সংগ্রহ করেন না। যার অর্থ দাঁড়ায় হয় প্রবৃদ্ধি কাল্পনিক ছিল, অথবা যারা প্রবৃদ্ধি থেকে উৎপন্ন আয় থেকে উপকৃত হয়েছে তারা করের আওতায় আসেনি। সম্ভবত এর একটি বড় অংশ দেশের বাইরে ফানেল করা হয়েছিল।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক কাজ হলো বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করা। নবনিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে বলেছেন যে, দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার জরুরি সহায়তার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে এবং অন্যান্য বহু-পাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে তহবিল চাইছে। রপ্তানিতে ব্যাঘাত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যা বর্তমান সংকটের আগে থেকেই কমে গিয়েছিল। গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে। বাংলাদেশ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো রেট ৫০ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। আদানি পাওয়ারের বাংলাদেশের কাছ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে।
১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশ উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্রাজুয়েশন পেতে আদৌ প্রস্তুত কিনা। সরকার পরিবর্তন এবং পরবর্তীতে সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণে জাতিসংঘ সম্প্রতি সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এলডিসি ক্যাটাগরির বাইরে যাওয়ার বিষয়টি স্থগিত করেছে। ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা গ্র্যাজুয়েশনের সমস্যা নয় বরং উন্নয়নের সমস্যা। অস্থিরতা এবং নেতৃত্বের পরিবর্তন সত্ত্বেও দেশ ট্র্যাকে রয়েছে।’
জাতিসংঘের প্যানেলে থাকা এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশ এখনও গ্রাজুয়েশন স্তরের জন্য তিনটি মানদণ্ডের উপরে রয়েছে: মাথাপিছু জিএনআই, মানব সম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুর্বলতা সূচক।
প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সহিংস বিক্ষোভে ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্লেবুকে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে। সবশেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। প্রথমে, আপনি বহুত্ববাদকে ঘৃণা করতে শুরু করেন , তারপরে আপনি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা বাতিল করেন, এবং তারওপরে আপনি আপনার পক্ষপাতদুষ্ট লোকদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে রাখেন - অগত্যা যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং তাদের আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে দেশ চলে। যাকে এককথায় চাটুকারিতা বলা যায়।’
No comments