ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ চায় না, তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত

ইসরাইল ও লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ কোনো পক্ষই যুদ্ধ চায় না। তবে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। রোববার সকালে তাদের মধ্যে বড় মাত্রায় হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে। এতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুতেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে একতরফা প্রায় ১০০ যুদ্ধবিমান হামলায় অংশ নিয়েছে। এরপর হিজবুল্লাহও রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিযেছে ইসরাইলে। যদি এই হামলায় ইসরাইলের সত্যি ১০০ যুদ্ধবিমান অংশ নিয়ে থাকে, তাহলে এটা লেবাননে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় হামলা। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পর এত বড় হামলা আর করেনি তারা। স্থানীয় সময় রোববার ভোর সাড়ে চারটার সময় ইসরাইল হামলা চালায়। জবাবে আধা ঘন্টা পরে ব্যাপক হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারে যুদ্ধ আবার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনিতেই ইসরাইল গাজায় গণহত্যায় লিপ্ত। তার ওপর ইরানে তারা হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েকে হত্যা করেছে। এর জবাব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইরান। যদি ইরান, লেবাননে যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইল তাহলে মধ্যপ্রাচ্য তা ছড়িয়ে পড়া কোনোক্রমেই আটকাতে পারবে না। ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামলার পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করেছে তেল আবিব। রোববার গণমাধ্যমকে এই তথ্য দিয়েছে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আত্মরক্ষার্থে হিজবুল্লাহ’র সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করছে ইসরাইলি বাহিনী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, যেসব অঞ্চলে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ’র ঘাঁটি রয়েছে সেখান থেকে বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যেতে সতর্ক করা হয়েছে। গত মাসে হিজবুল্লাহ’র প্রধানকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। এর প্রতিশোধ নিতেই ইসরাইলে ড্রোন হামলা করেছে ইরান সমর্থিত লেবাননের ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। রোববার ভোরে উত্তর ইসরাইলে ড্রোন হামলার সতর্কতা সাইরেন শোনা যায়। ইসরাইলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটিকে লক্ষ্য করে ১৫০টির বেশি ড্রোন ছুড়েছে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। এই হামলা প্রতিহত করতে কয়েক ডজন ইসরাইলি যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাগারি। ইসরাইলি বিমানগুলো দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ’র সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই ৩২০টির বেশি কাতিউশা রকেট নিক্ষেপ করেছে ইসরাইলের ভূখণ্ডে। যেগুলো ইসরাইলের ১১টি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি  বৈঠক করেছেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কমান্ডার ফুয়াদ শুক্‌রকে হত্যার প্রতিবাদে তারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখবে হিজবুল্লাহ’র নেতারা।
জুলাই মাসে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের এক হামলায় নিহত হন ফুয়াদ শুক্‌র। এরপরই ইসরাইলকে কড়া হুঁশিয়ারি দেয় হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি গত বছরের ৭ই অক্টোবরের পর থেকে হামাসের সমর্থনে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সমর্থনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে হিজবুল্লাহ।

No comments

Powered by Blogger.