পাটের দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক, কদর বেড়েছে পাটকাঠির
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে। জেলায় এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯০৫ টন।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাট প্রতি মণ ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা এবং নিম্নমানের পাট ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই পাটের আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা।
পাটচাষিরা বলছেন, অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি, পাট পচানোর জন্য পুকুর ভাড়াসহ নানা কারণে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অথচ বাজারে পাটের দাম একেবারই কম। অধিকাংশ পাটচাষি গর্ত খুঁড়ে শ্যালো ইঞ্জিন মাধ্যমে পানি দিয়ে দিচ্ছেন পাট জাগ। যার ফলে পাটের আশের রং নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে বাজারমূল্য। তবে পরিবর্তন হচ্ছে না শুধু পাটখড়ির; তাই পাটের আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা।
চরভদ্রাসন উপজেলা গাজিরটেক গ্রামের আলাউদ্দিন শেখ বলেন, উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে একটি পাটকাঠির মিল রয়েছে। সেই মিল থেকে ক্রেতারা এসে পাটকাঠি কিনে নেন। আমরা নিজেরাও মিলে পাটকাঠি নছিমনযোগে পৌঁছে দেই। এতে পাটকাঠি বিক্রি করে পাটের লোকসানও অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করছি। পাটকাঠির বাণিজ্যিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় একই ফসলে আমাদের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
সদরপুর উপজেলার পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের পাট চাষি ইউনুস ব্যাপারী বলেন, আমি এ বছর নয় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এবার চাষ করতে অনেক খরচ হয়েছে, বাজারে দাম সেই তুলনায় কম, মনে হয় না লাভ হবে। কিন্তু জমির পাট থেকে যে পাট খড়ি পেয়েছি তা ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করতে পারলে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তোষা, মেছতা ও কেনাফ জাতের পাটের চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। তবে মেছতা জাতের পাট বেশি চাষ হয়েছে। এবার চাষে খরচ বেশি হওয়ার কারণে পাট বিক্রি করে বেশি লাভবান হননি তারা। কিন্তু কৃষকরা পাট ছাড়াও পাটখড়ি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে বাড়তি আয় করছেন।
চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলার ৪ ইউনিয়নে মোট ৯২০ হেক্টর জমিতে এইচএস-২৪ জাতের পাটের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। ভালো ফলন হলেও চাষে খরচ বেশি হওয়াতে এবার বেশি লাভবান হননি কৃষকরা। কিন্তু পাটকাঠি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। একশ মোঠা পাটকাঠি ৫০০-৬০০ টাকাতে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এর ফলে পাটের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে কৃষকের বাড়ি থেকে পাটখড়ি কিনে তাদের গোডাউনে বিক্রি করার জন্য মজুদ করে রেখে দিচ্ছেন। পরবর্তীতে যখন পাটের সিজন থাকবে না উপজেলায় যখন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে তারা তখন বেশি দামে এই পাটকাঠি বিক্রি করবে বলে জানা গেছে।
এমনই একজন পাটকাঠি ব্যবসায়ী মিলন মোল্যা বলেন, এখন পাটকাঠি বিক্রির মৌসুম। তাই আমরা পাটচাষিদের কাছ থেকে ৮-১০ টাকা মোঠোপ্রতি কিনে শহরে গিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করছি। এতে করে ভ্যানপ্রতি আমাদের ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা মূলত বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর প্রায় এক মাসের মতো টানা খরা হয়েছে। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে। তবে খরচ বেড়েছে।
তিনি বলেন, পাটের আঁশের সঙ্গে পাটকাঠিও কৃষকদের আর্থিক সমর্থন দিতে পারে। আগে শুধু পাটকাঠি রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো; কিন্তু এখন পাটকাঠি দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও এগুলো দিয়ে পার্টিক্যাল বোর্ড ও পাটকাঠি পুড়িয়ে এর ছাই দিয়ে কম্পিউটারের প্রিন্টিং মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে জেলায় এবার পাটের দাম কিছুটা কম থাকলেও পাটখড়ির দাম এবার ভালো। যে কারণে কৃষকরা পাটখড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
No comments