‘রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না, আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই’
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামালের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি, মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
গুম হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদের ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ মঈনুল ও গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের ভাগ্নে ঈশান আহমদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করেছিলাম এরই মধ্যে ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ ও আনসার আলীকে ফিরে পাবো। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা আশা করবো, আমাদের গুম থাকা স্বজনদের বিষয়ে সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন, জাতিকে আশ্বস্ত করবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে আমাদের গুম হওয়া নেতৃবৃন্দের অবস্থান পরিষ্কার করুন, আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।
বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন দেশে ১২ বছর থেকে স্বজনদের অপেক্ষায় থাকতে হয়, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশে স্বাধীনতা ছিল না, আমরা বাকরুদ্ধ ছিলাম। দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রামের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আজো আমরা আমাদের প্রিয় নেতাদের প্রতিক্ষায় রয়েছি।
সরকার পতনের পর যখন মানুষ আয়নাঘর থেকে ফিরছিলেন, আমরাও আশায় ছিলাম আমাদের নেতারা ফিরে আসবেন। আমাদের নেতা এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ, আনসার আলীকে খুঁজে ফিরছি। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বলতে চাই, আর যেন মানববন্ধন ও আন্দোলন করতে না হয়। ইতিমধ্যেই অনেককে গ্রেপ্তার করেছেন। অচিরেই তাদের সন্ধান পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আজ দীর্ঘদিন পর ইলিয়াস আলীর পরিবারের সঙ্গে আমরাও আশায় বসেছিলাম। দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হবে, আমাদের স্বজনদের ফিরে পাবো। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে গুম করাতো। আমরা বিশ্বাস করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।
নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদের ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ মঈনুল বলেন, ঢাকার উত্তরা থেকে ১২ বছর পূর্বে আমার ভাই জুনেদ আহমদ ও দিনার গুম হন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমরা স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমরা স্বস্তি ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমাদের গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দিন।
গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের ভাগ্নে ঈশান আহমেদ বলেন, আমার মামা একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ছিলেন। গত ১২ বছর থেকে আমরা আমাদের বড় মামা ইফতেখার আহমদ দিনার, এম. ইলিয়াস আলী, আনসার আলীসহ আমাদের স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বোন ও জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাহসিন শারমিন তামান্না বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস হলেও আমাদের পরিবারের জন্য সারা বছই গুম দিবস। টিভিতে কোনো পোগ্রাম দেখলেই আমার ভাইয়ের কথা স্মরণ হয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কেন আমার ভাইকে গুম করা হলো। যখন কোনো মিছিল দেখি, তখন মনে হয় মিছিলের অগ্রভাগে আমার ভাই রয়েছে। ১২ বছর থেকে আমার ভাইকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমি রাস্তায় রয়েছি। যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন, তারা কী অমানবিক নির্যাতনে ছিলেন। হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে সারা দেশে আমার যত ভাইকে গুম-খুন করেছে, সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আমরা স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশা করেছিলাম। আমরা আর কতো অপেক্ষা করবো। আমার বাবা ছেলের শোকে শয্যাশায়ী, প্রতি মাসে তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। আমার বাবা ও মায়ের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। আমরা আর কোনো মানববন্ধন চাই না, আমরা রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না। আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই, আর কিচ্ছু চাই না।
No comments