মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ, একটি “ইসলামিক” রাষ্ট্রের “অনৈসলামিক” জাতির পিতা! by তাজবীর তন্ময়
ভারত উপমহাদেশের শেষ গভর্নর লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে নিজ বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহ।
দুপুরে খাবারের টেবিলে বসে রীতিমত অবাকই হন লর্ড মাউন্টব্যাটেনসহ উপস্থিত
অন্যান্য আমন্ত্রিতবর্গ। দিনটা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট, আরবি ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী চলছে রমজান মাস, মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেই খাওয়ার আয়োজন
করা হবে ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কিসের রোজা? কিসের পবিত্রতা! শূকরের মাংস
আর শরাব জিন্নাহর খুব পছন্দ তা জানতেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। সেদিন তাঁর
চাক্ষুষ প্রমাণ দেখলেন।
এইভাবেই চলমান রোজার মাসে শূকরের মাংস দিয়ে প্রস্তুত করা বিভিন্ন আইটেম আর নিজের পছন্দের শরাব ‘স্কচ’ দিয়ে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র ‘পাকিস্তান’ অর্জনের আনন্দ উৎযাপন করলেন মুসলিম রাষ্ট্রের স্থপতি কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহ।
উপরের বিবরণটি পড়েই একে সত্য ঘটনা ভেবে নিবেন না। এটি লেখকের কল্পনাপ্রসূত একটি দৃশ্যমাত্র। তবে জিন্নাহ যে মদ, শূকরের মাংসের বেশ বড় ভক্ত ছিলেন, সকালের নাশতায় বেকন খেতেন এবং দিনে অন্তত ৩০-৪০টির মত সিগারেট টানতেন- এসব তথ্য উঠে এসেছে একাধিক ইতিহাসবিদের বয়ানে। সে হিসাবে উপরের কাল্পনিক ঘটনাটি একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।
মিঠিবাঈ ঝিনা আর পুঞ্জা ঝিনার সন্তান মুহাম্মাদালির জন্ম করাচীতে হলেও তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন গুজরাটের অধিবাসী। মজার ব্যাপার হল, মুহাম্মাদালির বংশপদবী ছিল ঝিনাভাই এবং শুধু মুসলমান নয়, গুজরাটের হিন্দুদের মধ্যেও এই বংশপদবী ছিল, এখনও আছে। অন্নদা শঙ্কর রায় লিখছেন, “গুজরাটি প্রথা অনুযায়ী পুত্রের নামে পিতার নাম যোগ করে তারপর যোগ করতে হয় বংশের পদবী। যেমন গান্ধী বংশের করমচাঁদের পুত্র মোহনদাস গান্ধী, তাতা বংশের নাসরবানজির পুত্র জামশেটজি, খোজানি বংশের ঝিনাভাইয়ের পুত্র মুহাম্মাদালি ইত্যাদি”।
১৮৯৪ সালে বিলেতে লেখাপড়া করার সময় আধুনিক হওয়ার জন্য মুহাম্মাদালি তাঁর নামকে দুই ভাগ করে রাখেন মোহাম্মাদ আলি। পিতার নামকেও দুই ভাগ করে প্রথম অংশটুকু রেখে বর্জন করেন বাকিটুকু, ফলে বদলে যায় বংশ পদবীও। বিলেতি কায়দায় ‘ঝিনা’ উচ্চারণ হতে থাকে ‘জিনা’। সেই ‘জিনা’ই ভারতীয়দের মুখে উচ্চারিত হতো ‘জিন্না’ নামে, আলেমওলামারা আরবি টানে বলতেন ‘জিন্নাহ’।
হাস্যকর শোনালেও সত্য, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশকে বিভক্ত করে ফেললেও সে নীতির প্রতিফলন ছিল না জিন্নাহর নিজের ঘরেই। ১৯১৮ সালের ১৯ই এপ্রিল তার মক্কেল বিত্তবান পার্শি স্যার দীনশা পেটিটের কন্যা রতনবাই তথা রত্তিকে বিয়ে করেন। স্যার দীনশা এই বিয়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং জীবনদশায় কখনই মেয়েকে ক্ষমা করেননি। সুখী হয়নি এই পরিবার, ১৯১৯ সালে মেয়ে ‘দিনা ওয়াদিয়া’র জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যান রতনবাই। এবং বড় হয়ে মেয়ে দিনাও বেছে নেয় পার্শি সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান ছেলে নেভিল ওয়াদিয়াকে।
হিন্দু-মুসলমান আলাদা দুইটা জাতি- এটাই ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের মূলকথা। কিন্তু জিন্নাহর বোঝায় ভুল ছিল। জাতীয়তা শুধু ধর্মের ভিত্তিতে বানানো যায় না, জাতীয়তা নির্ধারিত হয় অনেক হিসেব নিকেশের পরে। ধর্ম দিয়ে যদি জাতীয়তা নির্ধারণ হত, তবে মধ্যপ্রাচ্যে কেবল একটি রাষ্ট্রই থাকতো, তারা আলাদা আলাদা ১৮-১৯ টা স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হত না। কেউ সৌদি, কেউ কুয়েতি, কেউ লেবানিজ, কেউ ফিলিস্তিনি পরিচয় দিত না।
এবং এই ব্যাপারটা জিন্নাহ বুঝতে পেরেছেন ৪৭ এর দেশভাগের পর। পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেখা গেলো জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব আর রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে কাজে দিচ্ছে না। জাতি গড়া যে কঠিন কাজ জিন্নাহ সেটা ততদিনে বুঝে গেছে। নেশন-স্টেট বা জাতি-রাষ্ট্র? না স্টেট-নেশন বা রাষ্ট্র-জাতি? এই গ্যাড়াকলেই আটকে পড়েন গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ।
মূলত জিন্নাহ সাহেব একটি মুসলিম রাষ্ট্র পেয়েছিলেন কিন্তু জাতি গঠন করতে পারেন নাই। যে কোনো দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যাবে স্বাধীনতার নায়করা আগে জাতি গঠন করেছেন, তারপর রাষ্ট্র অর্জনের সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তান জাতি-রাষ্ট্র হয় নাই, হয়েছে রাষ্ট্র-জাতি। দেশভাগের পর দেখা গেল কেউ দাবি করে আমি বেলুচ, কেউ বলে আমি বাঙালি, কেউ দাবি করে আমি পাঞ্জাবি, আবার কেউ বলে আমি পাঠান কিন্তু কেউ বলে না আমি পাকিস্তানী কিংবা মুসলমান। সবাই শুধু নিজের জাতিসত্ত্বার কথাটাই আগে দাবি করে।
পাকিস্তানে জিন্নাহর বিশ্বাস ছিল না, বাজির উপরেই পেয়ে গেছেন। অবশ্য এতে কংগ্রেসের হাত ছিল না এ কথা বললে ভুল হবে। কংগ্রেস চেয়েছিল পূর্ব পাঞ্জাব আর পশ্চিমবঙ্গ। চেয়েছিল দিল্লির একাধিপত্য, সংবিধানী সভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন পদ্ধতি তথা ওয়েটেজ প্রথার বিলুপ্তি। মুসলিম লীগকে দেশের তথা প্রদেশের একাংশ প্রদান না করলে এ ব্যাপারগুলো অর্জন সম্ভব হতো না। অর্থাৎ ইংরেজরা ভাগ করে দিয়ে গেল এ কথা খুব একটা সত্য নয়, বলা যায় কংগ্রেস ভাগ করে নিলো।
“পূর্বপুরুষে হিন্দু, ধর্মে কাফির, কর্মে ইংরেজ চর, দর্শনে হিন্দু বন্ধু” ছিলেন তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্রের জনক মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ। উপমহাদেশে অনেকগুলো স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের পরিবর্তে পাকিস্তান নামক একটি অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্য দায়ী জিন্নাহ নামক মানুষটার ক্ষমতার লোভ। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তান নামে কোন শব্দ ছিল না। কিন্তু ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ অনৈতিকভাবে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে মুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের বদলে “পাকিস্তান” নামে একটা রাষ্ট্র দাবি করেন। যদিও লাহোর প্রস্তাবে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ ছিল। জিন্নাহ অনৈতিকভাবে লাহোর প্রস্তাবের স্টেটস শব্দের ‘এস’ কেটে দিয়ে স্টেট লিখে বাঙালির সাথে বেইমানি করে শুরুতেই। তা না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয় ৪৭ সালেই।
আসলে পাকিস্তান আজও এক অদ্ভুত রাষ্ট্র। জিন্নাহ ছিলেন সেক্যুলার, বিয়ে করেছিলেন অন্য ধর্মের এক মেয়েকে, ৫ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও মদ পান করতেন, শূকরের মাংস ছিল তার প্রিয়। কিন্তু তিনি ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের জাতির জনক। এর চেয়ে হাস্যকর কিছু আর হতে পারে না।
এইভাবেই চলমান রোজার মাসে শূকরের মাংস দিয়ে প্রস্তুত করা বিভিন্ন আইটেম আর নিজের পছন্দের শরাব ‘স্কচ’ দিয়ে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র ‘পাকিস্তান’ অর্জনের আনন্দ উৎযাপন করলেন মুসলিম রাষ্ট্রের স্থপতি কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহ।
উপরের বিবরণটি পড়েই একে সত্য ঘটনা ভেবে নিবেন না। এটি লেখকের কল্পনাপ্রসূত একটি দৃশ্যমাত্র। তবে জিন্নাহ যে মদ, শূকরের মাংসের বেশ বড় ভক্ত ছিলেন, সকালের নাশতায় বেকন খেতেন এবং দিনে অন্তত ৩০-৪০টির মত সিগারেট টানতেন- এসব তথ্য উঠে এসেছে একাধিক ইতিহাসবিদের বয়ানে। সে হিসাবে উপরের কাল্পনিক ঘটনাটি একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।
মিঠিবাঈ ঝিনা আর পুঞ্জা ঝিনার সন্তান মুহাম্মাদালির জন্ম করাচীতে হলেও তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন গুজরাটের অধিবাসী। মজার ব্যাপার হল, মুহাম্মাদালির বংশপদবী ছিল ঝিনাভাই এবং শুধু মুসলমান নয়, গুজরাটের হিন্দুদের মধ্যেও এই বংশপদবী ছিল, এখনও আছে। অন্নদা শঙ্কর রায় লিখছেন, “গুজরাটি প্রথা অনুযায়ী পুত্রের নামে পিতার নাম যোগ করে তারপর যোগ করতে হয় বংশের পদবী। যেমন গান্ধী বংশের করমচাঁদের পুত্র মোহনদাস গান্ধী, তাতা বংশের নাসরবানজির পুত্র জামশেটজি, খোজানি বংশের ঝিনাভাইয়ের পুত্র মুহাম্মাদালি ইত্যাদি”।
১৮৯৪ সালে বিলেতে লেখাপড়া করার সময় আধুনিক হওয়ার জন্য মুহাম্মাদালি তাঁর নামকে দুই ভাগ করে রাখেন মোহাম্মাদ আলি। পিতার নামকেও দুই ভাগ করে প্রথম অংশটুকু রেখে বর্জন করেন বাকিটুকু, ফলে বদলে যায় বংশ পদবীও। বিলেতি কায়দায় ‘ঝিনা’ উচ্চারণ হতে থাকে ‘জিনা’। সেই ‘জিনা’ই ভারতীয়দের মুখে উচ্চারিত হতো ‘জিন্না’ নামে, আলেমওলামারা আরবি টানে বলতেন ‘জিন্নাহ’।
হাস্যকর শোনালেও সত্য, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশকে বিভক্ত করে ফেললেও সে নীতির প্রতিফলন ছিল না জিন্নাহর নিজের ঘরেই। ১৯১৮ সালের ১৯ই এপ্রিল তার মক্কেল বিত্তবান পার্শি স্যার দীনশা পেটিটের কন্যা রতনবাই তথা রত্তিকে বিয়ে করেন। স্যার দীনশা এই বিয়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং জীবনদশায় কখনই মেয়েকে ক্ষমা করেননি। সুখী হয়নি এই পরিবার, ১৯১৯ সালে মেয়ে ‘দিনা ওয়াদিয়া’র জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যান রতনবাই। এবং বড় হয়ে মেয়ে দিনাও বেছে নেয় পার্শি সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান ছেলে নেভিল ওয়াদিয়াকে।
হিন্দু-মুসলমান আলাদা দুইটা জাতি- এটাই ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের মূলকথা। কিন্তু জিন্নাহর বোঝায় ভুল ছিল। জাতীয়তা শুধু ধর্মের ভিত্তিতে বানানো যায় না, জাতীয়তা নির্ধারিত হয় অনেক হিসেব নিকেশের পরে। ধর্ম দিয়ে যদি জাতীয়তা নির্ধারণ হত, তবে মধ্যপ্রাচ্যে কেবল একটি রাষ্ট্রই থাকতো, তারা আলাদা আলাদা ১৮-১৯ টা স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হত না। কেউ সৌদি, কেউ কুয়েতি, কেউ লেবানিজ, কেউ ফিলিস্তিনি পরিচয় দিত না।
এবং এই ব্যাপারটা জিন্নাহ বুঝতে পেরেছেন ৪৭ এর দেশভাগের পর। পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেখা গেলো জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব আর রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে কাজে দিচ্ছে না। জাতি গড়া যে কঠিন কাজ জিন্নাহ সেটা ততদিনে বুঝে গেছে। নেশন-স্টেট বা জাতি-রাষ্ট্র? না স্টেট-নেশন বা রাষ্ট্র-জাতি? এই গ্যাড়াকলেই আটকে পড়েন গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ।
মূলত জিন্নাহ সাহেব একটি মুসলিম রাষ্ট্র পেয়েছিলেন কিন্তু জাতি গঠন করতে পারেন নাই। যে কোনো দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যাবে স্বাধীনতার নায়করা আগে জাতি গঠন করেছেন, তারপর রাষ্ট্র অর্জনের সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তান জাতি-রাষ্ট্র হয় নাই, হয়েছে রাষ্ট্র-জাতি। দেশভাগের পর দেখা গেল কেউ দাবি করে আমি বেলুচ, কেউ বলে আমি বাঙালি, কেউ দাবি করে আমি পাঞ্জাবি, আবার কেউ বলে আমি পাঠান কিন্তু কেউ বলে না আমি পাকিস্তানী কিংবা মুসলমান। সবাই শুধু নিজের জাতিসত্ত্বার কথাটাই আগে দাবি করে।
পাকিস্তানে জিন্নাহর বিশ্বাস ছিল না, বাজির উপরেই পেয়ে গেছেন। অবশ্য এতে কংগ্রেসের হাত ছিল না এ কথা বললে ভুল হবে। কংগ্রেস চেয়েছিল পূর্ব পাঞ্জাব আর পশ্চিমবঙ্গ। চেয়েছিল দিল্লির একাধিপত্য, সংবিধানী সভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন পদ্ধতি তথা ওয়েটেজ প্রথার বিলুপ্তি। মুসলিম লীগকে দেশের তথা প্রদেশের একাংশ প্রদান না করলে এ ব্যাপারগুলো অর্জন সম্ভব হতো না। অর্থাৎ ইংরেজরা ভাগ করে দিয়ে গেল এ কথা খুব একটা সত্য নয়, বলা যায় কংগ্রেস ভাগ করে নিলো।
“পূর্বপুরুষে হিন্দু, ধর্মে কাফির, কর্মে ইংরেজ চর, দর্শনে হিন্দু বন্ধু” ছিলেন তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্রের জনক মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ। উপমহাদেশে অনেকগুলো স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের পরিবর্তে পাকিস্তান নামক একটি অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্য দায়ী জিন্নাহ নামক মানুষটার ক্ষমতার লোভ। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তান নামে কোন শব্দ ছিল না। কিন্তু ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ অনৈতিকভাবে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে মুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের বদলে “পাকিস্তান” নামে একটা রাষ্ট্র দাবি করেন। যদিও লাহোর প্রস্তাবে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ ছিল। জিন্নাহ অনৈতিকভাবে লাহোর প্রস্তাবের স্টেটস শব্দের ‘এস’ কেটে দিয়ে স্টেট লিখে বাঙালির সাথে বেইমানি করে শুরুতেই। তা না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয় ৪৭ সালেই।
আসলে পাকিস্তান আজও এক অদ্ভুত রাষ্ট্র। জিন্নাহ ছিলেন সেক্যুলার, বিয়ে করেছিলেন অন্য ধর্মের এক মেয়েকে, ৫ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও মদ পান করতেন, শূকরের মাংস ছিল তার প্রিয়। কিন্তু তিনি ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের জাতির জনক। এর চেয়ে হাস্যকর কিছু আর হতে পারে না।
এরপরও কিছু মুসলমান নামধারী ধর্মান্ধ
আসবে জিন্নাহ সম্পর্কে গুনগান গাইতে। লেখককে গালাগালি দিয়ে, খোদার কসম
কেটে, দাবী করবে জিন্নাহই মুসলমানদের বন্ধু, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশের
জন্ম হত না… ইত্যাদি! তাদের উদ্দেশে এই গল্পটি-
১৯২৪ সালের ঘটনা। দিল্লিতে এক আলোচনা সভায় খোশ মেজাজে জিন্নাহ পাশে বসা সার তেজবাহাদুর সপ্রুকে বলেন,
*“আমার মনে হয় আমি হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা সমস্যার একটি সমাধান বাতলে দিতে পারি। আপনারা আপনাদের গোঁড়া পুরোহিত শ্রেণীকে উৎসাহ প্রদান করেন আর আমরাও আমাদের মোল্লা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলি। তাহলেই সাম্প্রদায়িক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে”। (সমগ্রন, পৃষ্ঠা-১২৬)
১৯২৪ সালের ঘটনা। দিল্লিতে এক আলোচনা সভায় খোশ মেজাজে জিন্নাহ পাশে বসা সার তেজবাহাদুর সপ্রুকে বলেন,
*“আমার মনে হয় আমি হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা সমস্যার একটি সমাধান বাতলে দিতে পারি। আপনারা আপনাদের গোঁড়া পুরোহিত শ্রেণীকে উৎসাহ প্রদান করেন আর আমরাও আমাদের মোল্লা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলি। তাহলেই সাম্প্রদায়িক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে”। (সমগ্রন, পৃষ্ঠা-১২৬)
No comments