কলকাতায় ডাক্তার ধর্ষণ: হত্যা মামলা সিবিআইতে

কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী একজন নারী ডাক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে ভারত জুড়ে। পিতামাতা এমন সব লক্ষণ পেয়েছেন যাতে মনে করা হচ্ছে তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য ডাক্তার ও স্টাফরা ধর্মঘট করছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি বলছে, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে ধর্ষিতার পিতামাতা বলেছেন, নিহতের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া গেছে। এর পরিমাণ প্রায় ১৫০ মিলিগ্রাম। এ থেকে তারা ধারণা করছেন, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এই মামলাটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তার মধ্যেই ধর্ষিতার পিতামাতা এই দাবি করেন। তারা পিটিশনে বলেছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণ ছিল গলা টিপে ধরা। এটাই যৌন নির্যাতনের পরিষ্কার লক্ষণ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভয়াবহ তথ্য দেয়া হয়েছে। নিহতের মাথায় ক্ষত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু পিটিশন দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তার দুই কানেই ক্ষত আছে। এতে বোঝা যায় প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। নিহতের ঠোঁটে ক্ষত আছে। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, হামলার সময় তার কণ্ঠরোধ করার বা মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে দেয়া হতে পারে। তার কাঁধে কামড়ের দাগ আছে। পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, অটোপসি রিপোর্টে নিহতের শরীরের ভেতরে প্রায় ১৫০ মিলিগ্রাম শুক্রাণু পাওয়া গেছে। এই পরিমাণ এটাই বলে দেয় যে, ধর্ষণে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল। এ থেকে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যে, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তারা আরও বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তাদের কন্যাকে হত্যার মিশনে জড়িত ছিল কমপক্ষে তিনজন।

মামলাটি সিবিআইয়ে স্থানান্তরের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে একজন স্বেচ্ছাসেবক। ঘন ঘন তাকে ওই হাসপাতালে দেখা যেতো। নিহতের পিতামাতা পিটিশনে বলেছেন, অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারে কোনোই পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অন্যদিকে পরিষ্কার তথ্যপ্রমাণ মিলেছে যে, তাদের কন্যাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এই অপরাধ একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। তারা পিটিশনে আরও জোর দিয়ে বলেছেন যে, আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তখনকার অধ্যক্ষ ও অন্য অংশীদারদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব ছিল তাদের। মামলাটি সিবিআইয়ে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট হাসপাতাল প্রশাসন, বিশেষ করে সাবেক অধ্যক্ষ ড. সন্দ্বীপ ঘোষের কড়া সমালোচনা করেছে। আদালত প্রশ্ন রেখেছে, একজন ডাক্তারকে মৃত অবস্থায় পাওয়ার পর পুলিশে কেন অভিযোগ দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধানের পদ ত্যাগ করেন ড. ঘোষ। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে অন্য একটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। নিহত ডাক্তারের পিতামাতা অভিযোগ করেছেন তাদের মেয়ের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে তড়িঘড়ি করে।

 এই হত্যায় অন্যদের জড়িত থাকাকে আড়াল করতে মিথ্যা ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। হাইকোর্টে মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের আইনজীবী বলেছেন, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং দু’জন নারী ডাক্তারের উপস্থিতিতে নিহতের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন নিহতের মা। রাজ্য পুলিশও দাবি করছে যে, তারা নিহতের পরিবারের সঙ্গে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট শেয়ার করেছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ময়নাতদন্ত করে তা ভিডিওগ্রাফিও করা হয়েছে, যাতে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না ওঠে। এই ভিডিও নিহতের পরিবারকে পাঠানো হয়েছে।  মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট মামলা সিবিআইতে স্থানান্তর করার পর এখন তা সিবিআইয়ের হাতে। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় এখন কেন্দ্রীয় এজেন্সির হেফাজতে রয়েছে। সিবিআইয়ের টিম এই মামলা তদন্তে তিনটি গ্রুপ করেছে। একটি গ্রুপ সেমিনার হল পরিদর্শন করবে, যেখানে ওই ডাক্তারের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। অন্যদল অভিযুক্তকে আদালতে তুলবে। এবং তার রিমান্ড চাইবে।
তৃতীয় দলটি কলকাতা পুলিশের সঙ্গে মামলার তদন্তে সমন্বয় করবে।

No comments

Powered by Blogger.