জিহাদের ছবি নিয়ে কেঁদেই চলেছেন মা

কোটা বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জিহাদ হোসেন (২৫)কে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার মা শাহিনুর বেগম। ছেলের ছবি বুকে চেপে কেঁদেই চলছেন তিনি। কান্না যেন থামছেই না তার। জিহাদের কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা নুরুল আমীম। ছোট ভাইকে হারিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করছেন বড় ভাই জিন্নাত মোল্লা ও দুই বোন জান্নাতুল ও জয়নব। জিহাদ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকার নুরুল আমিন মোল্লা ও শাহিনুর বেগমের ছেলে।

দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জিহাদ ছিলেন সবার ছোট। তাই পরিবারের সবার কাছে সে ছিল আদরের। ঢাকার যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সরকারি কবি নজরুল কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত ছিলেন জিহাদ। তার মা শাহিনুর বেগম আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। সন্তানের ছবি শাড়ির আঁচলে মুছে বার বার বুকে জড়িয়ে অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বিলাপ করছেন।

সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। তার এমন অকাল মৃত্যুতে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। জিহাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯শে জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দনিয়া কলেজ ও কাজলা ফুটওভার ব্রিজের মাঝামাঝি রাস্তায় বুকের ডান পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন জিহাদ। গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠী ও বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ওই এলাকার সালমান হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিহাদকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর বিকালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ঢামেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন শনিবার (২০শে জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার লাশ বহনকারী এম্বুলেন্সযোগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আবৃত কফিনে জিহাদের মরদেহ দশমিনা উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকায় নিজ বাসভবনের সামনে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পরে ২১শে জুলাই রোববার ভোরে দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে জিহাদের জানাজার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জিহাদ দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করে সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই কলেজে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন।
জিহাদের বাবা নুরুল আমিন মোল্লা বলেন, আমার ছেলে মেধাবী ছিল। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।

বড় বোন জান্নাতুল বলেন, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তথা দেশবাসীর অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমার ছোট ভাই জীবন উৎসর্গ করেছে। বড় ভাই জিন্নাত হোসেন বলেন, আমার ভাই জিহাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে। দেশে বিদ্যমান স্বৈরসরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আন্দোলন করেছে। আগামীর বাংলাদেশ যেন সুন্দর হয়, দুর্নীতিমুক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্ম যেন আমার ভাইয়ের এ অবদান মনে রাখে। শেখ হাসিনা সরকার স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল অন্য কোনো দল ভবিষ্যতে এ ধরনের  কোনো চেষ্টা যেন না করে। তাহলেই আমার ভাই ভালো থাকবে। আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.