চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবো: বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে ৩ কর্মকর্তা by ফারুক আহমেদ চৌধুরী

নিয়মানুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় থাকতে পারবেন না। সরকারের এমন নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের ৩ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। বিধি ভেঙে একই কর্মস্থলে দু’জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) ৭ বছর ও একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) ১০ বছর ধরে আছেন। তারা হলেন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) মো. মাহবুব আলম (৭ বছর), উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল শরীফ (১০ বছর) ও  মো. আব্দুর রহমান (৭ বছর)। তবে তাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ রাখলে তাদের কিছুই করার নেই। কর্তৃপক্ষ বদলি করলে তারা চলে যাবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকায় তারা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়মে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা কীভাবে একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাউবো’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মানবজমিন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার পর নিজেরাই বদলির জন্য তোড়জোড় করেছেন। তাদের অনিয়মের অপরাধ সামনে আসার আগেই চলে যেতে চাইছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সর্বগ্রাসী পদ্মা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নদীভাঙন এ জেলার প্রধান সমস্যা। ভাঙন রোধে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত। তারা সাত-দশ বছর ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন। প্রকল্প তদারকির নামে ফাঁকিবাজি, ঠিকাদারদের সঙ্গে সিন্ডিকেট, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনে সহযোগিতার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এদিকে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে চাকরি করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম নিয়েও। পদ্মার ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি মেগা প্রকল্প চলমান। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত প্রকল্পে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৭ কোটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৩ কোটি টাকায়।

সংশিষ্ট সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের অধীন ৬.১০ কিলোমিটার নতুন নদীতীর সংরক্ষণ কাজ ২৯টি প্যাকেজে, ৪ কিলোমিটার আগের বাস্তবায়ন হওয়া নদীতীর রক্ষা কাজের পুনর্বাসনের কাজ চারটি প্যাকেজে এবং ৮ কিলোমিটার আগের নির্মিত বাঁধের পুনরাকৃতিকরণ কাজ একটি প্যাকেজে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এই তিন কর্মকর্তা চলমান এই প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযুক্ত প্রকৌশলীরা নিয়মিত তদারকি করছেন না। ফলে কাজের মান নিয়ে ফাঁকিবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) মো. মাহবুব আলম বলেন, আমি ৭ বছর থেকে এখানে আছি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেছিলাম। কিন্তু এক বছর আগে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছি। বদলি না করলে আমার কী করার আছে? পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি আমাকে একই জায়গায় দীর্ঘদিন রাখে তাহলে তো আমি সেখানেই থাকবো। আর আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।

১০ বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকার কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল শরীফ বলেন, বোর্ড রেখেছে তাই আছি। তাছাড়া আমি একটু অসুস্থ। বদলি তো আমার হাতে নেই। নামপ্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছরই কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদকাল সম্পর্কিত তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়। এরপরের দায়িত্ব তাদের। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা বলেন, মাহবুব আলম নামে একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে এরই মধ্যে বদলি করা হয়েছে। বাকি দু’জনের বিষয়েও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.