খন্দকার মোশতাকের উত্থান-পতন by এমরান হোসাইন শেখ
খন্দকার মোশতাক আহমেদ |
বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে যে নামটি সবার আগে আসে, তা হলো খন্দকার মোশতাক আহমদ।
দেশের আপামর জনগণের কাছে একজন নিন্দিত ও ঘৃণিত ব্যক্তি। বন্ধু হিসেবে বুকে
টেনে নেওয়া জাতির পিতার হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন এই বিশ্বাসঘাতক।
জাতির পিতাকে হত্যার পরপরই নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও।
১৯১৯ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্ম মোশতাক আহমদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনকারী এই ঘাতকের শুরুর জীবন এতটা কালিমালিপ্ত দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতিতে তার বিচরণ ছিল। মুসলিম লীগের ছাত্র শাখার নেতৃত্ব পালন করেন। পরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। এ সময় উদীয়মান তরুণ এবং ক্যারিশমেটিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নজরে আসেন মোশতাক। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিল তার পদচারণা।
মোশতাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অতি ভক্ত। আওয়ামী লীগের ভেতর তিনি ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলে বামপন্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে মোশতাক আওয়ামী লীগে আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ‘ হয়ে ওঠেন। অতি বিনয়ী ভদ্রতার মুখোশ পরা হাসিতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেন।
খন্দকার মোশতাক ১৯৪২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়া হলে ১৯৫৪ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি মুক্ত হয়ে আবারও সংসদে যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করার পর তিনি আবারও বন্দি হন। তিনবার জেল খেটে বঙ্গবন্ধুর আরও কাছে আসেন। ৬ দফা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গ্রেফতারও হন। দেশের আটটি রাজনৈতিক দল ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করলে তাতে খন্দকার মোশতাক আহমদ পশ্চিম পাকিস্তান অংশের সমন্বয়ক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোশতাক অন্যদের মতো ভারতে পাড়ি জমান এবং মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করলে সেখানেও বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় মোশতাককে। ১৯৭৫ সালে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে তাকে করা হয় বাণিজ্যমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভারত নীতিতে মোশতাকের সমর্থন ছিল না। তবুও বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবজাত মহানুভবতায় তাকে নবগঠিত বাকশালে ঠাঁই দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য ও আসামির জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, পচাঁত্তরের মাঝামাঝি মোশতাকের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তিনি নিজে ও আত্মীয়দের মাধ্যমে সেনা সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ সময় গাজীপুর, কুমিল্লাসহ ঢাকায় সহযোগীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর জবাববন্দিতে বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের মে বা জুনের প্রথম দিকে গাজীপুরের সালনা হাইস্কুলে ঢাকা বিভাগীয় স্বনির্ভর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সালনাতে মোশতাক সাহেব সেনা অফিসারদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমাদের আন্দোলনের অবস্থা কী?’ জবাবে তারা জানান যে, ‘বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা তার প্রতিনিধি।’ ১৯৭৫ সালের জুনে দাউদকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেনা অফিসারদের মধ্যে মেজর রশীদ, মেজর বজলুল হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর ফারুক যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে গেলে খন্দকার মোশতাক বলেন, ‘এ সপ্তাহে ব্রিগেডিয়ার জিয়া দুইবার এসেছিলেন। তিনি এবং তার লোকেরা তাড়াতাড়ি কিছু একটা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন।’ আমি জিজ্ঞাসা করায় খন্দকার মোশতাক জানান, ‘বলপূর্বক মত বদলাইতে চায়, প্রয়োজনবোধে যেকোনও কাজ করতে প্রস্তুত।’ খন্দকার মোশতাককে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান যে, তিনি তার মতামত দিয়েছেন। কারণ, এছাড়া অন্য আর কাজ কিছু নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল অনুমান ৬টার সময় খাদ্যমন্ত্রী টেলিফোনে আমার কাছে জানতে চান যে, ‘গুলির আওয়াজ শুনেছি কিনা।’ আমি না বলে জানাই। পরে আমাকে পুনরায় টেলিফোনে রেডিও শুনতে বলেন। রেডিওতে শুনি মেজর ডালিমের ঘোষণা, ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ বুঝলাম, তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল পরিকল্পনায় যে মোশতাক ছিলেন, তা স্পষ্ট হয় ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পরপরই। ওইদিনই মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সূর্যসন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। ক্ষমতায় বসে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মোশতাক ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করেন। তার শাসনামলেই চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। কারাবন্দি করা হয় আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে। অবশ্য এত কিছুর পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি মোশতাক। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর খালেদ মোশারফের পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তাকে বন্দি করা হয়। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর মোশতাক প্রথমে বন্দি থাকলেও ১৯৭৬ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। আদালত তাকে পাঁচ বছরের শাস্তি প্রদান করেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। তবে রাজনীতিতে আর সফলতা পাননি। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আ.ফ.ম. মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এর আগেই ওই বছরের ৫ মার্চ মোশতাক মৃত্যুবরণ করেন। ফলে হত্যার দায় থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
মৃত্যুর পর পুলিশ পাহারায় দাউদকান্দির দশপাড়ায় তাকে দাফন করা হয়। বর্তমানে সীমানা প্রাচীর ঘেরা তার বাড়িতে দোতলা একটি ভবন রয়েছে। এছাড়া, সেখানে একটি মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থান আছে। মোশতাকের ছেলেমেয়েরা বিদেশে বসবাস করেন। প্রথমদিকে তারা মাঝে মধ্যে দেশে এলেও জনরোষের ভয়ে গত কয়েক বছর ধরে তারা দেশে ফেরেননি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে মোশতাক আহমেদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন,‘‘খন্দকার মোশতাককে তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সূক্ষ্ম কূটচাল চালতে দেখেছেন। দেশে যখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছিল, মোশতাক বলাবলি করতেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জীবিত পেতে চাইলে দেশ স্বাধীন হবে না।’ তবে আমরা কৌশল করে তার জবাবে বলতাম— দুটোই চাই। ষড়যন্ত্রের কারণে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় মোশতাককে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। তখন অলিখিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজ করতেন আব্দুস সামাদ আজাদ। ওই সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা জোরদার করেন মোশতাক। তার এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে।’’
‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে মোশতাককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুর
লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে বেশ কয়েকবার খন্দকার মোশতাক আহমদের নাম
এসেছে। বইয়ের নির্ঘণ্টে দেখা গেছে, ৮টি পৃষ্ঠায় তার নাম বা প্রসঙ্গ এসেছে।
দেখা গেছে, কোনও কোনও পৃষ্ঠায় একাধিকবার তার নাম এসেছে। বইয়ে উল্লিখিত সময়ে
খন্দকার মোশতাক নিজেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জেলে ছিলেন। কখনও একই জেলখানায়
কখনও ভিন্ন স্থানে। বঙ্গবন্ধু তাঁর বর্ণনায় কখনও কখনও মোশতাকের শারীরিক
অসুস্থতা বা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন।
রোজনামচা বইয়ে বঙ্গবন্ধু ও খন্দকার মোশতাক জেলে থাকতে কোনও এক বাংলা নববর্ষে (১৫ এপ্রিল) পরস্পরকে ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, এক কোরবানির ঈদে একসঙ্গে নামাজ পড়ার কথাও রয়েছে। মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু তাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন। কখনও বা নাম উল্লেখ করেছেন। মোশতাক অন্য জেলে থাকলে বিভিন্ন মাধ্যমে তার খবর নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
জেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোশতাক সম্পর্কে বইয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি দেখলাম, মোশতাক হাসপাতালের বারান্দায় চেয়ারে বসে রয়েছে। চেনাই কষ্টকর। বেচারাকে কী কষ্টই না দিয়েছে! একবার পাবনা, একবার রাজশাহী একবার ঢাকা জেল।’
আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘খন্দকার মোশতাক আহমদ ও আবদুল মোমিন সাহেব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মোশতাক সাহেবের শরীর খুবই খারাপ। ওজন অনেক কম হয়ে গেছে। মোমিন সাহেব এখন ভালো। তাদের সাথে দেখা হয়েছিল হাসপাতালের দরজায়। তারা সব দলের ঐক্য চায়। তবে পূর্ব বাংলার দাবি ছেড়ে নয়, ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছে।’
৬ দফা আন্দোলনের সময় একসঙ্গে জেলে যাওয়ার পর অন্যান্য নেতার পাশাপাশি মোশতাক সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন জাতির পিতা। তিনি লিখেছেন, ‘মোশতাক সাহেব তো পুরনো পাপী। অত্যন্ত সহ্য শক্তি, আদর্শে অটল। এবার জেল তাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে— একবার পাবনা জেলে, একবার রাজশাহী জেলে, আবার ঢাকা জেলে নিয়ে। কিন্তু সেই অতি পরিচিত হাসিখুশি মুখ।’
২৩-২৭ এপ্রিল ১৯৬৭ সময়ের একটি বর্ণনায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমি, সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন, বিশিষ্ট নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমেদ জেলে আছি। আমরা ছয় দফা দাবির জন্য জেলে এসেছি।’
কারাগারের রোজনামচা বইয়ে জাতির পিতা যেসব রাজনীতিক বা ব্যক্তির বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন, বইটির শেষাংশে তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এসব ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোন্দকার মোশতাক আহমেদও রয়েছেন। বইটিতে তার জীবনী সম্পর্কে যা তুলে ধরা হয়েছে তা হলো— ‘খোন্দকার মোশতাক আহমদ (১৯১৯-১৯৯৬): বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দক্ষিণপন্থী অংশের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নানা সন্দেহজনক ও বিতর্কিত কাজে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারের (১৯৭১-৭৫) বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক হত্যায় তার (মোশতাক) গোপন সমর্থন ও সহায়তা ছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭৫-এ দেশদ্রোহী স্বাধীনতাবিরোধী কতিপয় সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তাকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসায়। ক্ষমতায় বসেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কতক মৌলিক রাষ্ট্রীয় আদর্শের পাশ্চাৎমুখী পরিবর্তন ঘটান। তিনি বাংলাদেশের একজন নিন্দিত রাজনীতিবিদ।
>>>তথ্য সূত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একাধিক আসামি ও সাক্ষীর সাক্ষ্য, কারাগারের রোজনামচাসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একাধিক বই এবং গণমাধ্যমে দেওয়া আমির হোসেন আমুর একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ।
১৯১৯ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্ম মোশতাক আহমদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনকারী এই ঘাতকের শুরুর জীবন এতটা কালিমালিপ্ত দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতিতে তার বিচরণ ছিল। মুসলিম লীগের ছাত্র শাখার নেতৃত্ব পালন করেন। পরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। এ সময় উদীয়মান তরুণ এবং ক্যারিশমেটিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নজরে আসেন মোশতাক। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিল তার পদচারণা।
মোশতাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অতি ভক্ত। আওয়ামী লীগের ভেতর তিনি ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলে বামপন্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে মোশতাক আওয়ামী লীগে আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ‘ হয়ে ওঠেন। অতি বিনয়ী ভদ্রতার মুখোশ পরা হাসিতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেন।
খন্দকার মোশতাক ১৯৪২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়া হলে ১৯৫৪ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি মুক্ত হয়ে আবারও সংসদে যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করার পর তিনি আবারও বন্দি হন। তিনবার জেল খেটে বঙ্গবন্ধুর আরও কাছে আসেন। ৬ দফা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গ্রেফতারও হন। দেশের আটটি রাজনৈতিক দল ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করলে তাতে খন্দকার মোশতাক আহমদ পশ্চিম পাকিস্তান অংশের সমন্বয়ক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোশতাক অন্যদের মতো ভারতে পাড়ি জমান এবং মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করলে সেখানেও বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় মোশতাককে। ১৯৭৫ সালে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে তাকে করা হয় বাণিজ্যমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভারত নীতিতে মোশতাকের সমর্থন ছিল না। তবুও বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবজাত মহানুভবতায় তাকে নবগঠিত বাকশালে ঠাঁই দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য ও আসামির জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, পচাঁত্তরের মাঝামাঝি মোশতাকের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তিনি নিজে ও আত্মীয়দের মাধ্যমে সেনা সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ সময় গাজীপুর, কুমিল্লাসহ ঢাকায় সহযোগীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর জবাববন্দিতে বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের মে বা জুনের প্রথম দিকে গাজীপুরের সালনা হাইস্কুলে ঢাকা বিভাগীয় স্বনির্ভর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সালনাতে মোশতাক সাহেব সেনা অফিসারদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমাদের আন্দোলনের অবস্থা কী?’ জবাবে তারা জানান যে, ‘বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা তার প্রতিনিধি।’ ১৯৭৫ সালের জুনে দাউদকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেনা অফিসারদের মধ্যে মেজর রশীদ, মেজর বজলুল হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর ফারুক যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে গেলে খন্দকার মোশতাক বলেন, ‘এ সপ্তাহে ব্রিগেডিয়ার জিয়া দুইবার এসেছিলেন। তিনি এবং তার লোকেরা তাড়াতাড়ি কিছু একটা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন।’ আমি জিজ্ঞাসা করায় খন্দকার মোশতাক জানান, ‘বলপূর্বক মত বদলাইতে চায়, প্রয়োজনবোধে যেকোনও কাজ করতে প্রস্তুত।’ খন্দকার মোশতাককে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান যে, তিনি তার মতামত দিয়েছেন। কারণ, এছাড়া অন্য আর কাজ কিছু নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল অনুমান ৬টার সময় খাদ্যমন্ত্রী টেলিফোনে আমার কাছে জানতে চান যে, ‘গুলির আওয়াজ শুনেছি কিনা।’ আমি না বলে জানাই। পরে আমাকে পুনরায় টেলিফোনে রেডিও শুনতে বলেন। রেডিওতে শুনি মেজর ডালিমের ঘোষণা, ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ বুঝলাম, তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল পরিকল্পনায় যে মোশতাক ছিলেন, তা স্পষ্ট হয় ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পরপরই। ওইদিনই মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সূর্যসন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। ক্ষমতায় বসে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মোশতাক ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করেন। তার শাসনামলেই চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। কারাবন্দি করা হয় আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে। অবশ্য এত কিছুর পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি মোশতাক। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর খালেদ মোশারফের পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তাকে বন্দি করা হয়। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর মোশতাক প্রথমে বন্দি থাকলেও ১৯৭৬ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। আদালত তাকে পাঁচ বছরের শাস্তি প্রদান করেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। তবে রাজনীতিতে আর সফলতা পাননি। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আ.ফ.ম. মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এর আগেই ওই বছরের ৫ মার্চ মোশতাক মৃত্যুবরণ করেন। ফলে হত্যার দায় থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
মৃত্যুর পর পুলিশ পাহারায় দাউদকান্দির দশপাড়ায় তাকে দাফন করা হয়। বর্তমানে সীমানা প্রাচীর ঘেরা তার বাড়িতে দোতলা একটি ভবন রয়েছে। এছাড়া, সেখানে একটি মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থান আছে। মোশতাকের ছেলেমেয়েরা বিদেশে বসবাস করেন। প্রথমদিকে তারা মাঝে মধ্যে দেশে এলেও জনরোষের ভয়ে গত কয়েক বছর ধরে তারা দেশে ফেরেননি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে মোশতাক আহমেদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন,‘‘খন্দকার মোশতাককে তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সূক্ষ্ম কূটচাল চালতে দেখেছেন। দেশে যখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছিল, মোশতাক বলাবলি করতেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জীবিত পেতে চাইলে দেশ স্বাধীন হবে না।’ তবে আমরা কৌশল করে তার জবাবে বলতাম— দুটোই চাই। ষড়যন্ত্রের কারণে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় মোশতাককে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। তখন অলিখিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজ করতেন আব্দুস সামাদ আজাদ। ওই সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা জোরদার করেন মোশতাক। তার এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে।’’
‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে মোশতাককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু
মোশতাকের গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু |
রোজনামচা বইয়ে বঙ্গবন্ধু ও খন্দকার মোশতাক জেলে থাকতে কোনও এক বাংলা নববর্ষে (১৫ এপ্রিল) পরস্পরকে ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, এক কোরবানির ঈদে একসঙ্গে নামাজ পড়ার কথাও রয়েছে। মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু তাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন। কখনও বা নাম উল্লেখ করেছেন। মোশতাক অন্য জেলে থাকলে বিভিন্ন মাধ্যমে তার খবর নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
জেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোশতাক সম্পর্কে বইয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি দেখলাম, মোশতাক হাসপাতালের বারান্দায় চেয়ারে বসে রয়েছে। চেনাই কষ্টকর। বেচারাকে কী কষ্টই না দিয়েছে! একবার পাবনা, একবার রাজশাহী একবার ঢাকা জেল।’
আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘খন্দকার মোশতাক আহমদ ও আবদুল মোমিন সাহেব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মোশতাক সাহেবের শরীর খুবই খারাপ। ওজন অনেক কম হয়ে গেছে। মোমিন সাহেব এখন ভালো। তাদের সাথে দেখা হয়েছিল হাসপাতালের দরজায়। তারা সব দলের ঐক্য চায়। তবে পূর্ব বাংলার দাবি ছেড়ে নয়, ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছে।’
৬ দফা আন্দোলনের সময় একসঙ্গে জেলে যাওয়ার পর অন্যান্য নেতার পাশাপাশি মোশতাক সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন জাতির পিতা। তিনি লিখেছেন, ‘মোশতাক সাহেব তো পুরনো পাপী। অত্যন্ত সহ্য শক্তি, আদর্শে অটল। এবার জেল তাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে— একবার পাবনা জেলে, একবার রাজশাহী জেলে, আবার ঢাকা জেলে নিয়ে। কিন্তু সেই অতি পরিচিত হাসিখুশি মুখ।’
২৩-২৭ এপ্রিল ১৯৬৭ সময়ের একটি বর্ণনায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমি, সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন, বিশিষ্ট নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমেদ জেলে আছি। আমরা ছয় দফা দাবির জন্য জেলে এসেছি।’
কারাগারের রোজনামচা বইয়ে জাতির পিতা যেসব রাজনীতিক বা ব্যক্তির বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন, বইটির শেষাংশে তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এসব ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোন্দকার মোশতাক আহমেদও রয়েছেন। বইটিতে তার জীবনী সম্পর্কে যা তুলে ধরা হয়েছে তা হলো— ‘খোন্দকার মোশতাক আহমদ (১৯১৯-১৯৯৬): বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দক্ষিণপন্থী অংশের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নানা সন্দেহজনক ও বিতর্কিত কাজে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারের (১৯৭১-৭৫) বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক হত্যায় তার (মোশতাক) গোপন সমর্থন ও সহায়তা ছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭৫-এ দেশদ্রোহী স্বাধীনতাবিরোধী কতিপয় সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তাকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসায়। ক্ষমতায় বসেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কতক মৌলিক রাষ্ট্রীয় আদর্শের পাশ্চাৎমুখী পরিবর্তন ঘটান। তিনি বাংলাদেশের একজন নিন্দিত রাজনীতিবিদ।
>>>তথ্য সূত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একাধিক আসামি ও সাক্ষীর সাক্ষ্য, কারাগারের রোজনামচাসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একাধিক বই এবং গণমাধ্যমে দেওয়া আমির হোসেন আমুর একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ।
No comments