‘বন্ড ০০৭’ এখন ‘টিম ৬১’ by মো. মিজানুর রহমান

২রা জুলাই ভোররাতে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর নয়নের একটি ছবি ‘টিম ৬১’ গ্রুপে আপলোড করেন শাহরিয়ার। চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের সদস্যরা ‘টিম ৬১’ নামের ভিন্ন একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সক্রিয় থেকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং ঘটনা প্রবাহে নজর রাখছেন বলে জানা যায়। রিফাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর আগে রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর অনেক সদস্যই গ্রুপ ত্যাগ করেন। অন্যদিকে রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে তৈরি করা হয় ‘টিম ৬১’ নামের নতুন গ্রুপ। প্রথমদিকে গ্রুপে অনেককে যোগ করা হলেও পরবর্তীতে শুধু বিশ্বস্তদের রেখে বাকিদের রিমুভ করা হয় নতুন এ গ্রুপ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘টিম ৬১’-এর একজন সদস্য বলেন, ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপটি নিষ্ক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই নতুন এ গ্রুপটি তৈরি করা হয়। সেখানে ৬১ জন সদস্যকে যোগ করার কারণে গ্রুপের নামকরণ ‘টিম ৬১’ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়।
সেই সদস্য জানান, ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের সদস্য শাহরিয়ার ইমরান, সাদনাম পাপ্পু, আসিফ সৈকত, আব্দুল্লাহ রিফাত নতুন গ্রুপে সক্রিয় থেকে ঘটনার দিকে নজর রাখছেন এবং রিফাত হত্যাকাণ্ড ও নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
ফেঁসে যাচ্ছেন সংসদ সদস্যপুত্র সুনাম দেবনাথ
রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়। এই ঘটনার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয় যখন হত্যাকাণ্ডের ২১ দিন পরে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার দিন যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন সেই মিন্নিকেই ফাঁসাতে তৎপর হয়ে ওঠেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ।
তার লোকজনই মিন্নির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের কুৎসা রটায়। মিন্নির গ্রেপ্তারে চাপ তৈরিতে সুনাম দেবনাথ নিজে উপস্থিত থেকে রিফাত শরীফের বাবাকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করান। আবার বরগুনার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনে তিনি নিজেও মিন্নির গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।
বরগুনার স্থানীয়দের অভিযোগ, সুনাম দেবনাথের এমন তৎপরতায়ই পুলিশ তদন্তের রূপরেখা তৈরি করে। মূল আসামিকে বাদ দিয়ে মামলার প্রধান সাক্ষীকে আসামি করতে তারা তৎপর হয়ে ওঠে। মিন্নির পক্ষে না দাঁড়াতে আইনজীবীদেরও চাপ দেন সুনাম দেবনাথ। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নির গ্রেপ্তারের পর বরগুনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সুনাম দেবনাথ।
অভিযোগ রয়েছে, সুনাম দেবনাথ তার পিতার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে মামলার তদন্তে নানা রকম প্রভাব খাটাচ্ছেন। তবে চাপের বিষয় মানতে নারাজ বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।
পুলিশ সুপার বলেন, কেউ চাপ দিচ্ছে না। চাপ তো দূরে থাক কেউ মামলার বিষয়ে কোনো অনুরোধও করছে না।
আরো অভিযোগ রয়েছে, মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে ক্ষান্ত হননি সুনাম দেবনাথ। মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবিতে নিজে মানববন্ধন করার সঙ্গে নিজের অনুসারীদের দিয়ে ফেসবুক এবং ইউটিউবে এ হত্যাকাণ্ডকে নানাভাবে নারীঘটিত বিষয় হিসেবে প্রমাণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে সুনাম দেবনাথের বক্তব্য জানতে গত কয়েক দিনে অসংখ্যবার তার মোবাইলফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মিন্নি ভালো নেই, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে: মিন্নির সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তারা বরগুনা জেলা কারাগারের সামনে এসেছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তারা মিন্নির সঙ্গে দেখা করে মলিন মুখে চলে গেছেন।
এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর অনেকটা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি কোনো মতামত দিতে রাজি না হলেও রাগের সঙ্গে বলেছেন, তার মেয়ে ভালো নেই, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন। সাদা পোশাকধারী পুলিশের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য মেয়ের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতেও পারেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.