বিভক্ত কাশ্মীর by নাইমা আহমেদ মাহজুর

এটাকে বিবর্তন বলুন বা কাকতালীয়ই বলুন, আমরা যেন রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছি। এই প্রবৃদ্ধি বা সম্প্রসারণের বেশিরভাগই ডিজিটাল, বাস্তব নয়, যেটা আমরা স্মরণাতীত কাল থেকে বহু প্রতারণা, চুক্তি আর জোটের কারণে হারিয়ে ফেলছি।
আজকাল আমাদের মূলধারার রাজনীতি আগাছার মতো বাড়ছে। বহু আকর্ষণীয় ও চমক লাগানো পথ রয়েছে এখানে। অফিসিয়াল সিস্টেমের চেয়েও সহজে বেশি শক্তিশালী হওয়া যায় এখানে, যেখানে সিস্টেমের মধ্যে উপরে উঠতে হলে বহু নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে এগুতে হয়। রাজনীতি কিছু সীমিত মানুষের জন্য সারা জীবনের একটা লটারির মতো, যারা সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। আমাদের এই ধরনের সৌভাগ্যবান বংশও রয়েছে।
একই সাথে রক্তপাত, হত্যা ও ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ারও কোন বিরাম নেই। আমাদের তরুণরা তাদের জীবন নিয়ে খেলছে এবং আমরা আমাদের মানব সম্পদ হারাচ্ছি।
মূলধারার একমাত্র ইস্যু হলো যে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সেই একই মন্ত্র আওড়ে যাচ্ছে তারা, যেটা বহু বিশ্লেষকের কাছে হট কেকের মতো। ছবির অন্য দিকটা অন্ধকার ও বিষণ্ন। বহু তরুণের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মাতৃভূমির জন্য জীবন দেয়া এবং তারাও কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানের জন্য লড়ে যাচ্ছে।
আমাদের জঙ্গল আর বাগানগুলোতে কি ঘটছে। বন্দুকযুদ্ধ এখন প্রতিদিনের ঘটনা। কিছুদিন শোক করার পর জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদেরকে একা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে যাতে তারা নিজেদের মতো পথ খুঁজে নিতে পারে বা কিভাবে কোন আয় বা সহায়তা ছাড়া জীবিত থাকা যায় সেটা শিখে নিতে পারে। মানবাধিকার কর্মী থেকে গণতন্ত্রের যারা চ্যাম্পিয়ন তাদের কারোরই একটি কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে না, কারণ সবকিছুকেই এখানে ‘সন্ত্রাসবাদের’ সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবেই এখানকার জনগণ কাশ্মীরের সকল বিশৃঙ্খলা ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে বাস করতে শিখেছে।
ভারতের অনেকে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে থাকেন যে কাশ্মীরের চলমান আন্দোলনের রিমোট কন্ট্রোল তাদের হাতেই রয়েছে, কারণ কাশ্মীরের তরুণদের নিজেদের আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ তাদের হাতে নেই। কিন্তু জেনারেল মুশাররফ এই তত্ত্ব অস্বীকার করার পর থেকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মজার ব্যাপার হলো কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানই ভারতকে সতর্ক করেছে যে পুলওয়ামা ধরনের জঙ্গি হামলা আবার হতে পারে। সে কারণে এই প্রচারণার বড়ি গেলাটা কঠিন।
সাত দশকের রাজনৈতিক ব্যাভিচার কি যথেষ্ট নয়?
প্রতিটি নেতা বা প্রতিটি রাজনীতিবিদকে কি আমরা যাচাই করিনি? ৩৭০ বা ৩৫এ অনুচ্ছেদ তারা সংরক্ষণ করতে পারেনি, এই একমাত্র অস্ত্রটা অন্তত তারা রক্ষা করতে পারতো। এটা কোন ধরনের ঔদ্ধত্য যে জম্মু ও কাশ্মীরের ঐক্য বিনষ্টকারী কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অপমান ও তাদেরকে অমানবিক পর্যায়ে নামিয়ে এনে কি না তাদের আবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত, যেখানে প্রায় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচজন তরুণ হারাচ্ছি আমরা।
এবং, আমাদের গুরুত্বের সাথে চিন্তা করে দেখা উচিত যে নিরপরাধ ও অসহায় কাশ্মীরিদের সাথে কি ধরনের রাজনীতির খেলা খেলা হচ্ছে, যারা দুঃখজনকভাবে রাজনীতিবিদদের সব কথায় বিশ্বাস করে…
বহু গ্রুপ ও জাত এবং রাজনীতি ও আদর্শের কারণে আমরা জাতি হিসেবে চরম বিভক্ত হয়ে গেছি। এই বিভক্ত জাতি যদি একত্র হয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে একটা মধ্যবর্তী জায়গায় না আসে, তাহলে আমরা কিছুই পাবো না। আমরা বরং সবকিছুই হারাচ্ছি – ভাষা, সংস্কৃতি, পরিচয় এবং সংবেদনশীলতা – সব। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো আমরা আমাদের তরুণদের হারাচ্ছি, যারা আমাদের ভবিষ্যৎ… গুরুত্বের সাথে এটা ভেবে দেখা দরকার…
(লেখক বিবিসির সাবেক সম্পাদক ও পেঙ্গুইন লেখক)

No comments

Powered by Blogger.