চীনা নৌবাহিনীর ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে চায় ভারত: নৌবাহিনী প্রধান

চীনা নৌবাহিনীর ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় সম্পর্কিত শ্বেতপত্র প্রকাশের একদিন পর ভারতের নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল করমবীর সিং বলেছেন যে, নৌবাহিনীর উপর চীনের মনযোগ নতুন কিছু নয়। এটা তাদের নৌ পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

চীনা নৌবাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্যাপারে ভারতের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে এডমিলার সিং বলেন, সীমিত বাজেট ও সম্পদ নিয়ে চীনের সঙ্গে কিভাবে তাল মেলানো যায় তা খতিয়ে দেখছে ভারতীয় নৌবাহিনী।

গত বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লিতে ‘জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে জাতি গঠন’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের সাইডলাইনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিং বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে পিএলএ নেভির কাছে প্রচুর সম্পদ স্থানান্তর করা হচ্ছে। এটা স্পষ্টতই তাদের নৌ পরাশক্তি হওয়ার ইচ্ছাটি প্রকাশ করে। আমরা এর উপর নজর রাখছি এবং দেখছি কিভাবে আমাদের বাজেট ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা দিয়ে তার মোকাবেলা করা যায়।

‘চায়না’স ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন দি নিউ এরা’ শীর্ষক ডকুমেন্ট প্রকাশের পর ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান ওই বক্তব্য দেন। ডকুমেন্টে নৌবাহিনীর উপর চীনের গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয় যে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরেও বেইজিং তার ভূমিকা বিস্তার করতে চায়।

ওই শ্বেতপত্রে বলা হয়: পিএলএ সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা উন্নত করছে এবং বিদেশে চীনা স্বার্থগুলোর সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট ম্যাকানিজম পরিমার্যন করছে। বিদেশে অপারেশন ও সহায়তায় ঘাটতি দূর করতে দূর সাগরে মোতায়েনযোগ্য বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। চীন বিদেশে লজিস্টিক্যাল ফ্যাসিলিটি নির্মাণ করছে এবং বিচিত্র সামরিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সামর্থ বাড়াচ্ছে।

গত বছরের ভারতীয় বাজেটে বাহিনীর আধুনিকায়নে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বরাদ্দ দেয়া হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২০১৯-২০ সালের বাজেটে মাত্র ৩.২ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়, যা চলতি ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১% বৃদ্ধি।

এর মধ্যে ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে নৌবহরের আধুনিকায়নে। মাত্র ৩৪৭ মিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে এয়ারক্রাফট ও বিমানের ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে। ক্যাপিটাল একুইজিশন খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছিলো ভারতীয় নৌবাহিনী।

পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির এক রিপোর্টে বলা হয় যে শুধু ২০১৮-১৯ সালেই প্রতিশ্রুত দায়ের ঘাটতি ছিলো ১.৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪০%। গত তিন বছর ধরে এই অবস্থা চলে আসছে।

ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি ক্রমে বাড়লেও ভারতীয় নৌবাহিনী প্রয়োজনীয় নৌবল সংগ্রহ করতে পারছে না। সারা বছর প্রতিশ্রুত বকেয়া দেনা পরিশোধ বিলম্বিত করার মাধ্যমে বাজেট সামলাতে হয়। ফলে আধুনিকায়ন ও নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে বলে কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

বাজেট ঘাটতির কারণে ফ্রিগেট, এয়ারক্রাফট কেরিয়ার, নেভাল অফশোর পেট্রোল ভেসেল, ফাস্ট ইন্টারসেপ্টর ক্রাফট ও নেভাল হেলিকপ্টারের মতো  জরুরি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বছরের পর বছর বিলম্বিত হচ্ছে।

এরপরও নৌবাহিনী প্রধান আশা করছেন যে সাবমেরিন তৈরির ‘প্রকল্প ৭৫ আই’ ও নৌ হেলিকপ্টার প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। সিং আশা করছেন যে চলতি বছরের মধ্যেই ২৪টি মাল্টিরোল হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি সই হবে।

No comments

Powered by Blogger.