জুয়ার ‘আখড়া’ চন্দ্রিকা মার্কেট

জুয়ার আখড়া সিলেটের তালতলা। উপরে নন্দিতা সিনেমা হল। আর নিচে মার্কেট। নাম চন্দ্রিকা মার্কেট। এই মার্কেটই যত কু-কীর্তির আস্তানা। পুলিশ হরদমই ওই মার্কেটে অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে জুয়াড়িরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
পুলিশের অভিযানের পরপরই আবার যেই সেই অবস্থা। কোনো পরিবর্তন নেই। জুয়াড়িরা মেতে ওঠে জুয়া খেলায়। ঘটছে নানা অপরাধও। চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটছে, আটকও হচ্ছে- কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। মার্কেটের দোকানিরা জানিয়েছেন, সিন্ডিকেট আটক হচ্ছে না। তারা আড়ালে থেকে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে। তবে সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- যতদিন তালতলার ওই জুয়ার আস্তানা বন্ধ না হবে ততদিন অভিযান চলবে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতেও পুলিশ ওই আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। শিলং তীর নামক জুয়ায় এখন সয়লাব সিলেট নগর। এটি নতুন নয়। ৪-৫ বছর আগে এই খেলা সিলেটে বিস্তার লাভ করে। সিলেটের পার্শ্ববর্তী মেঘালয় রাজ্যের একটি জুয়া খেলা। প্রায় এক যুগ ধরে এই খেলা সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জাফলং, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটে জনপ্রিয় ছিল। টাকার বিনিময়ে টিকিট নাম্বার ক্রয় করে লটারি প্রক্রিয়ায় এই খেলা। এক সময় তা ছড়িয়ে পড়ে সিলেট নগরীতেও। এটি এখন গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সিলেট নগরীর পাড়ায় পাড়ায় রয়েছে জুয়ার বোর্ড। এমনকি কোনো কোনো পাড়ায় একাধিক বোর্ড পরিচালনা করা হয়। এই শিলং তীরের অন্যতম হেডকোয়ার্টারে পরিণত হয়েছে তালতলার ওই চন্দ্রিকা মার্কেটের জুয়ার আস্তানা। তালতলার পাশেই নন্দিতা সিনেমা হল। আগে এখানে ছিল তিনটি সিনেমা হল। দুটি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নন্দিতা সিনেমা হল কোনো মতে টিকে আছে। বাংলা ছায়াছবি প্রদর্শনের অন্যতম এই সিনেমা হলের সামনে দর্শকের সব সময় সমাগম থাকে। আর এই সুযোগে শিলং তীরের জুয়াড়িরা এখানে ঘাঁটি পেতেছে। সিনেমা হলের নিচের মার্কেটকে অনেকেই চন্দ্রিকা মার্কেট নামে চিনেন। এই মার্কেটের নিচ তলার ভেতরে শিলং তীরের এজেন্টরা অবস্থান নেয়। সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তারা দিনের নাম্বার বিক্রি করে। আবার রাতেও তারা টিকিট বিক্রি করে। এই মার্কেটের জুয়ায় অংশ নিতে শহরের অন্যান্য এলাকা এবং শহরতলী থেকেও জুয়াড়িরা ভিড় জমায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই মার্কেটে শিলং তীরের বোর্ডের মালিক হেলাল আহমদ। পার্শ্ববর্তী একটি এলাকায় বসে তিনি এই বোর্ড পরিচালনা করেন। এখানে হক, রবিউল, সুমন, আমির সহ কয়েকজন তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে তাদের তথ্য পৌঁছেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ অভিযানকালে গ্রেপ্তারও হয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ঝান্ডুমান্ডু জুয়ার একটি আস্তানা। শিলং তীর খেলার মতো এই ঝান্ডুমান্ডু জুয়ার আস্তানার জুয়াড়ি সিন্ডিকেট আড়ালে থাকে। এই আস্তানার নিয়ন্ত্রক নবান রোডের কামরুল সহ আরো কয়েকজন। পুলিশ ওই আস্তানা থেকে কিছু সংখ্যক জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানে সতর্ক হয়েছে পার্শ্ববর্তী কাজিরবাজারের কাঁঠালহাটা সহ কয়েকটি আস্তানার জুয়াড়িরা। কাজিরবাজার এলাকায় এখন আর জুয়ার আস্তানা বসে না। তবে কাঁঠালহাটা এলাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিলং তীরের একটি বোর্ড সক্রিয় রয়েছে। সেই বোর্ডও পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকায় বসে জুয়াড়িদের নিয়ন্ত্রণ করে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তালতলার নন্দিতা সিনেমা হলের নিচের জুয়ার আস্তানায় কয়েক মাসে অর্ধশতাধিক বার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে কম করে হলেও ২০০ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন- শিলং তীর ‘বায়বীয়’ খেলায় পরিণত হয়েছে। ফলে সিন্ডিকেট সদস্যদের আটক করা যায় না। তবে পুলিশ জুয়ার বোর্ড বন্ধে অভিযানে রয়েছে। যতদিন এখানে জুয়া খেলা বন্ধ না হবে ততদিন চলবে বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুয়ার পাশাপাশি ওখানে একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় রয়েছে। নগরীর তালতলা পয়েন্ট পর্যন্ত ওই চক্র সক্রিয়। এ ছাড়া তালতলা এলাকায় প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব কিছুর জন্য দায়ী হচ্ছে জুয়াড়ি সিন্ডিকেট।
গ্রেপ্তার ১৫: সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখা থেকে গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- গত বুধবার রাতে তালতলার ওই আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় শিলং তীর খেলার সময় তারা নন্দিতা সিনেমা হলের নিচ তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে ১৫ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া, জুয়া খেলার স্থান থেকে দুটি মোটরসাইকেল, একটি ফোর স্ট্রোক (সিএনজি) এবং বিভিন্ন নোটের নগদ ১২৪০ টাকা, ঝান্ডুমান্ডু জুয়ার বোর্ড ও জুয়া খেলায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। আটককৃত জুয়াড়িদের মধ্যে রয়েছে, নূরুল ইসলাম, সবুজ মিয়া, আল আমিন, মোজাহিদ উদ্দিন, সারওয়ার আহমদ, খোকন আলী, মো. ইবাদুল শেখ, মো. আলী হোসেন, সুধীর রায়, তুহিন আহমদ, মামুন মিয়া, কামাল উদ্দিন, সাহেদ মিয়া, রফিক মিয়া ও তহুর আলী।

No comments

Powered by Blogger.