হঠাৎ বদলে গেল দৃশ্যপট: জাহাঙ্গীর চুপ, লড়াইয়ের ঘোষণা হাসানের by রুদ্র মিজান

প্রচার-প্রচারণা চলছিল জোরেশোরে। নির্বাচনী আমেজ নগরীর সর্বত্র। সকাল থেকেই প্রচারে নেমেছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু দুপুরের পর হঠাৎই বদলে যায় দৃশ্যপট। উচ্চ আদালত থেকে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ আসার পর থেমে যায় সব কোলাহল। বন্ধ  হয়ে যায় মাইকিং। গণসংযোগ থামিয়ে দেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী আমেজ পরিণত হয় ক্ষোভ আর বিক্ষোভে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অফিসে এবং দুই দলের মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থীর বাসায় ভিড় বাড়তে থাকে কর্মী-সমর্থকদের। তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। তাদের নানা জিজ্ঞাসা। জবাব দিতে পারছিলেন না মেয়র প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দ।
গতকাল সকাল থেকেই গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে গাজীপুর আদালত এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। একইভাবে টঙ্গীতে গণসংযোগ করছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। টঙ্গীতে নিজ বাড়িতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও গণসংযোগ শেষে নগরীর অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। এর মধ্যেই সংবাদটি পান। ভিড় বাড়তে থাকে হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়িতে। একইভাবে জয়দেবপুর এলাকার রাজবাড়ি সড়কের বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অফিসে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সকালে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমই, এফবিসিসিআই’র নেতাদের সঙ্গে সাইনবোর্ড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় বৈঠক করেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে সেখানে গণসংযোগ করেন তিনি। সেখান থেকে জয়দেবপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই নির্বাচন স্থগিতের খবর পেয়ে নির্বাক হয়ে যান এই মেয়র প্রার্থী। তাৎক্ষণিকভাবেই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
নির্বাচন স্থগিতের খবর পেয়ে বিএনপি অফিসে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কথা বলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি জেনেই তাদের দলের এক নেতাকে দিয়ে আদালতে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। তারা জনগণ ও জনমতকে ভয় পায়।
আওয়ামী লীগের ওই এলাকার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, তারা ভাবতে পারেননি এভাবে নির্বাচন স্থগিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এগিয়ে ছিল বলে মনে করেন তারা।
দুপুরের পর নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশনা আসার পর সাধারণ ভোটারদের মাঝেও দেখা যায় হতাশার ছাপ। নির্বাচনী উৎসবমুখর গাজীপুরে রাত থেকে অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। এ ছাড়া নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা আসার পর বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের প্রচারণায় থাকা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তার বাসা ঘিরে পুলিশের অবস্থান নেয়ায় অনেকটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষদের মাঝে।
 সিটি করপোরেশনের ইটাহাঁটা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি উৎসবের মধ্যে ছিলাম। ক’দিন পরেই নতুন মেয়র পেতাম। ভোটাধিকারের সেই সুযোগটি এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এটা আমাদের মেনে নিতে খারাপ লাগছে।
সকাল থেকে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা রাজপথে থাকলেও বিকাল থেকে চুপসে যান সবাই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের কোনো কিছু না বলে ঢাকা চলে যাওয়ায় তার কর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়ে মাঠ ছেড়ে যান। টঙ্গি রেল স্টেশন এলাকায় কথা হয় একরাম হোসেনের সঙ্গে। অনেকটা হতাশার সঙ্গে বলেন, হঠাৎ কি এমন হলো যে নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। আর বন্ধ করলে নির্বাচনের ৯ দিন আগে কেন। তিনি বলেন, যে চেয়ারম্যান রিট করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় ওনি কোথায় ছিলেন। তখন তার রিট করার কথা মনে ছিল না। আরেক ভোটার ফরিদ সরকার বলেন, সীমানা সমস্যা থাকলে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে কিভাবে।

No comments

Powered by Blogger.