চাঞ্চল্যকর হত্যার তদন্ত (২): ফারুকী হত্যা রহস্য রয়েই গেল by আল আমিন

দেশের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের তালিকায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের প্রধান খতিব ও টেলিভিশন উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড। প্রায় ৩ বছর ৮ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি সংশ্লিষ্টরা। ফারুকী হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়। থানা পুলিশ মামলাটি অনিহা প্রকাশ করে ডিবিতে হস্তান্তর করে। এরপর ডিবি পুলিশ এ ঘটনার কোনো ক্লু না পেয়ে সিআইডিতে হস্তান্তর করেন। সিআইডিতে এখন পর্যন্ত তিন বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘটনার কোনো ক্লু পায়নি। সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, জঙ্গি, আর্থিক লেনদেন এবং পূর্বশত্রুতা- এই তিন বিষয়কে কেন্দ্র করে মামলার তদন্ত চলছে। সিআইডির পক্ষ থেকে তারা বিভিন্ন বিষয় ধরে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
২০১৪ সালের ২৭শে আগস্ট শেরেবাংলানগর থানার পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বর বাড়ির দোতলায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকারীরা ওই বাড়িতে মুরিদ সেজে ঢুকেছিল। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে পরিবার ও অন্য মুরিদানদের চোখ বেঁধে জিম্মি করে ফেলে। পরে তাকে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাত নয়জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ফারুকী টেলিভিশনের উপস্থাপনা ছাড়াও একাধিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মতিন) প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।
এ বিষয়ে নিহতের ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী মানবজমিনকে জানান, প্রায় ৩ বছর ৮ মাস পার হয়ে গেল কিন্তু, এখন পর্যন্ত কী কারণে আমরা বাবা খুন হয়েছেন তা জানতে পারলাম না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, সিআইডিতে একাধিবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে। যেই কর্মকর্তা আসে সেই আমাদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দেন ক্লু বের করার। কিন্তু, কেউ ক্লু বের করতে পারছে না, আসামিদেরও ধরতে পারছে না।
মামলাটির তদন্তকারী সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. মাহমুদ হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা কয়েকটি ইন্টিলেজেন্স নিয়ে কাজ করছি। দ্রুত এ বিষয়ে একটা ভালো ফলাফল জানাতে পারবো। আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে আরও দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তদন্ত করা হচ্ছে। একটি তার আর্থিক বিষয় এবং অন্যটি পূর্বশত্রুতা। ফারুকী পীরপন্থী বলে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তার মতাদর্শ নিয়ে সমালোচনা ছিল। কয়েকজন আলেম তার মতাদর্শ বিরোধিতা করে ফতোয়া দিয়েছেন। তবে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে তার বিরোধিতাকারীদের খুনের সঙ্গে কোনো যোগসাজস পাওয়া যায়নি।  
ফারুকী খুন হওয়ার চার দিন পর ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া থেকে মাহমুদা বেগম, শরীফুল ইসলাম এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে মো. ইউসুফ নামে ফারুকীর তিন মুরিদকে আটক করে। ওই খুনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতারও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানান, ওই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। খুনিরা বাড়িতে ফারুকীর মুরিদ পরিচয়ে প্রবেশ করেন। তারা ফারুকীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এতে বোঝা যায় তারা আগেও ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং ফারুকীর সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছিলেন। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও তার পারিবারিক, ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিজীবনে কারো সঙ্গে শত্রুতা ছিল কি না তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে তদন্তকারী সংস্থা। তাকে একাধিকবার মোবাইল ফোন এবং ফেসবুকেও হুমকি দেয়া হয়েছিল। ফেসবুকের পেইজ ও মোবাইল ফোনের কললিস্টও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সিআইডির কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহার করেও ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা দৃশ্য ও বস্তুগত আলামত থেকেও কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেননি। সূত্র জানায়, ফারুকী প্রত্যেক বছরে তার নিজস্ব এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জে লোক পাঠাতেন।  টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি-না সেই বিষয়টিও তদন্তের আওতায় রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.