স্তন স্ফীতকরণ? সাবধান

অনেক মেয়ে নিজেকে আকর্ষণীয় দেখাতে ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট বা স্তন স্ফীতকরণ করিয়ে থাকেন। চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের স্তন স্ফীত করে কাঙ্খিত আকৃতি দিয়ে দেন। আবার বয়সের সঙ্গে নারীদের এই অঙ্গটি ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে, নিজেকে আবেদনময়ী করে তুলতে অনেক নারী ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করান। এক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে নারীর প্রাকৃতিক স্তনের ভিতরে সিলিকনের তৈরি থলথলে একটি চাকতি প্রবেশ করিয়ে দেন। এতে নারীকে দেখায় আকর্ষণীয়। তাকে দেখায় টগবগে এক যুবতীর মতো। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যেসব নারী এভাবে ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করানো হলেও শত শত নারী তাদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে নিচ্ছেন টাইম বোমা। গবেষকরা বলছেন, যেসব নারী ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করিয়েছেন তাদের মধ্যে শত শত নারী এখন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করানো প্রতি ৩০০০ নারীর মধ্যে একজন নারী এনাপ্লাস্টিক লার্জ সেল লিফোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তাদের বক্তব্য হলো, এই স্ফীতকরণের ফলে নারীর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। এমনকি দু’ বছরের মধ্যে অনেক নারীকে অপারেশন করাতে হয়। এ খবর দিয়েছে পশ্চিমা একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করানোর কারণে ক্যান্সারের ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে থাকা শত শত বৃটিশ নারীর স্তনে অপারেশন করতে হয়েছে। নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্তন স্ফীতকরণ প্রক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রথমে যতটুকু ধারণা করা হয়েছিল এখন সেই ঝুঁকি তার চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এক সময় বিশ্বাস করা হতো বেস্ট ইমপ্লান্ট করানো হয়েছে এমন প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে একজনেরও কম নারী এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু গত সপ্তাহে নতুন গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে প্রতি ৩০০০ নারীর মধ্যে একজন এমন ঝুঁকিতে রয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, স্তন স্ফীতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনাপ্লাস্টিক লার্জ সেল লিমফোমা (বিআইএ-এএলসিএল) কোনো স্তন ক্যান্সার নয়। কিন্তু এটি হলো ‘নন হজকিনস’ লিম্ফোমা। এটি হলো রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমের ক্যান্সার। এ ধরনের ক্যান্সার দেখা দিতে পারে সুনির্দিষ্ট কিছু ধরনের নারীর ক্ষেত্রে। যেমন যদি স্তনের ওপরের ত্বক দেখতে বাজে হয় এবং সেক্ষেত্রে অপারেশন করানো হয়। বৃটেনে শতকরা ৯৯ ভাগ নারীর ক্ষেত্রে স্তনে এমন চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অপারেশনের গড়ে সাত বছর পরে এই ধরনের ক্যান্সারের উৎপত্তি হতে থাকে। তবে যদি একবার এই রোগ শুরুতে ধরা পড়ে তাহলে তা নিরাময়যোগ্য। কিন্তু যদি শুরুতে এ রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব না হয়, চিকিৎসা নেয়া না হয় তাহলে এ থেকে যে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের ডা. মার্ক ক্লিমেনস বলেন, যদি এমন ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল। আপনি যদি বিআইএ-এএলসিএল-এর কথা ভাবেন। মনে করুন এটি হলো একটি ম্যাচের কাঠি। যখন এটা ম্যাচ বক্সের ভিতরে আছে তখন এটা নিরাপদ। কিন্তু তা একবার সেখান থেকে বেরিয়ে এলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে। বিআইএ-এএলসিএল নিয়ে গবেষণার সামনের সারিতে থাকা সার্জন প্রফেসর আনন্দ দেব বলেন, শুধু গত বছরে তারা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখতে পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান স্কুল অব এডভান্সড মেডিসিনের প্রফেসর তিনি। বলেন, এই রোগ সম্পর্কে আমাদেরকে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। গবেষণার সর্বশেষ ফল প্রকাশ করা হয়েছে নিউ ইয়র্কে দ্য এস্থেটিক মিটিং ২০১৮ তে। আমেরিকান সোসাইটি ফর এস্থেটিক প্লাস্টিক সার্জারি প্রতি বছর বার্ষিক ভিত্তিতে এই মিটিং আহ্বান করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, শুধু বৃটেনে প্রতি বছর ৫০ হাজার নারী স্তন স্ফীতকরণের অপারেশন করিয়ে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.