প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট by কাজী সোহাগ

দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। হয়েছে প্রস্তুতিরও পরিবর্তন। তবে এবার চূড়ান্ত উৎক্ষেপণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত দেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। প্রতিদিনই চলছে কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সবচেয়ে বড় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা ছিল স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট বা স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটের প্রাক-উৎক্ষেপণ পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোতে শুক্রবার সন্ধ্যায় কেনেডি স্পেস সেন্টারে ওই পরীক্ষা করে স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। এই প্রতিষ্ঠানের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটকে মহাকাশে পাঠানো হবে। সফল পরীক্ষা শেষে স্পেস এক্স শনিবার টুইটারে এক বিবৃতি দেয়। এতে জানানো হয়, ফ্যালকন-৯-এর ব্লক-৫-এর স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট ঠিকভাবে শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই রকেটে করে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট মহাকাশে যেতে পারে। রকেটের কারিগরি অবস্থা বেশ ভালো। পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে আরো কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চূড়ান্ত দিন ও সময় জানতে পারবো। তখন আমাদের দেশের দিক থেকে কিছু আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি নেয়া হবে। এর আগে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার পর স্যাটেলাইট উৎক্ষেণপণ পিছিয়ে যায়। এমনকি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকতার আমন্ত্রণপত্র, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি সবকিছু চূড়ান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায়। এদিকে স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ স্থল ফ্লোরিডায় সরকারের ৪২ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল থাকবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার পর জাতীয়ভাবে তা উদযাপন করা হবে। প্রকৃতপক্ষে আমরা যখন স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে শুরু করবো তখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট শুধু কারিগরি বা ব্যবসার বিষয় নয়, এটি আমাদের গর্বের বিষয়। আমার মনে হয়েছে আমাদের প্রস্তুতি যতটুকু করা সম্ভব ছিল তার কোনটার কোনো কমতি নেই। ভবিষ্যতের ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এরপর ২, ৩, ৪ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এখন অপরিহার্য ভাবনা। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পের পরিচালক মো. মোজবাউজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন কেবল কিছু ‘কানেকটিভিটির’ কাজ বাকি রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, বলা হচ্ছে, আগামী ৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিনিয়োগের পুরো টাকা উঠে আসবে। এটা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমরা যদি ক্যাপাসিটি বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিক্রি করতে না পারি, তাহলে সেলিব্রেশন করে লাভ নেই। বিপণনের ক্ষেত্রে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, তিন হাজার কোটি টাকা, আমি ৭/৮ বছরের কথা বলছি না, বিনিয়োগের টাকা যেন উঠে আসে, সেভাবে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। গত ৩০ মার্চ একটি বিশেষ বিমানে করে ফ্রান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল লঞ্চ প্যাডে স্যাটেলাইটটি পৌঁছায়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য তৈরি এ স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের জন্য আর বাকি ২০টি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে। সফলভাবে মহাকাশে গেলে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হবে বাংলাদেশ। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।

No comments

Powered by Blogger.