এখন যেমন চলছে ইউএস-বাংলা by দীন ইসলাম

নেপালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এয়ারক্রাফটে ওঠার পর যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহার, ভেতরে নিরাপত্তা নির্দেশিকা, জরুরি অবস্থায় বহির্গমন দরজা কীভাবে খুলতে হয় তা হাতে কলমে শিক্ষা এবং পাইলটদের কথাবার্তায় যাত্রীরা যাতে সাহসী থাকেন এমন প্রেরণাদায়ক কিছু করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভ্রমণকালে এমন বেশকিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। তবে যাত্রীদের চোখে-মুখে ভীতির ছাপ দেখা যায়। এদিন বেলা একটায় কক্সবাজার থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স উড়াল সময় ঘোষণা করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে যাত্রীদের জন্য বোয়িং-৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটের দরজা খুলে দেয়া হয়। যাত্রীদের স্বাগত জানাতে বিজনেস ক্লাসের কাছে দরজার সামনে দুই জন কেবিন ক্রু দাঁড়ানো ছিল। উড়োজাহাজে ওঠার সময় কয়েক জন যাত্রীকে উচ্চ স্বরে দোয়া পড়তে শোনা যায়। কোনো কোনো যাত্রী উচ্চ শব্দে কান্না করে বলেন, আমি টিকিট বদল করতে বলেছি। তুমি আমার কথা শুনলে না। সব যাত্রীকে উড়োজাহাজে ওঠানোর পর নিরাপত্তার খাতিরে বেল্ট পরতে বলা হয়। এরপর একজন কেবিন ক্রু ‘সূরা জুখরুফ’-এর আয়াত পড়ে শোনান। এরপর বাংলা অর্থের তরজমা করার সময় শেষদিকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাবো’। সূরা আরবি ও বাংলায় তরজমার পর কেবিন ক্রু পাইলট জাকিউল ও ফার্স্ট অফিসারের পক্ষ থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে ভ্রমণের জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। ধন্যবাদ পর্ব শেষে উপর থেকে মনিটর নেমে আসে। যাতে নিরাপত্তামূলক বার্তা দেখানো হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে কেবিন ক্রুরা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেন। যাত্রীরা বেশ আগ্রহ ভরে এসব নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেখেন ও শোনেন। জরুরি অবতরণের সময় কোন ছয়টি বহির্গমন পথ ব্যবহার করতে হবে তা দেখানো হয়। এসব বহির্গমন পথের দরজা কীভাবে খুলতে হবে সেটাও দেখিয়ে দেন কেবিন ক্রুরা। উড়োজাহাজটি আকাশে উড়ার ১৫ মিনিট পর পাইলট জাকিউর তার টিমের পক্ষ থেকে সব যাত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে ভ্রমণের জন্য বেছে নেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাইলট জাকিউর বলেন, আমি, একজন ফার্স্ট অফিসার এবং চার জন কেবিন ক্রু এয়ারক্রাফটটিতে দায়িত্ব পালন করছি। ২০ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়োজাহাজ চলছে। আশা করছি ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হবো। তবে আকাশে হালকা মেঘ রয়েছে। পাইলটের কথাবার্তা ছিল বেশ উদ্দীপনামূলক। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে পাইলটের কথা শেষে বিমান যাত্রী ও এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহরিন আমরান বলেন, আমার ভ্রমণ জীবনে পাইলটের উদ্দীপনামূলক কথাবার্তা কমই শুনেছি। তবে পাইলটের কথা শুনে অনেক যাত্রী আশ্বস্ত হয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জিএম কামরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, যাত্রীরা আমাদের আস্থার জায়গা। তাদেরকে ভালো সেবা দিতে আমাদের বিভিন্ন পরিবর্তন আসতেই পারে। বড় দুর্ঘটনার পর আমরা কিছু পরিবর্তন এনেছি। আগামীতে এগুলো অব্যাহত থাকবে। এর আগে গত ১২ই মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। এতে নিহত হন ৫১ জন। যাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। ময়নাতদন্ত সাপেক্ষে এদের মধ্যে মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রায় সবার মরদেহ দেশে এসে পৌঁছেছে। এ দুর্ঘটনার পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ধস নামে। যাত্রী সংখ্যা কমে যায়। এর ভিত্তিতেই ফ্লাইট ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে ইউএস- বাংলা।

No comments

Powered by Blogger.