ভোট চাওয়া রাজনৈতিক অধিকার, যেখানে যাব সেখানেই ভোট চাইব -প্রধানমন্ত্রী

রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে নৌকায় ভোট চাওয়া রাজনৈতিক অধিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি একটি দলের সভাপতি। আমি নৌকায় ভোট চাইব, এটা আমার রাজনৈতিক অধিকার। রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে যেখানে যাবো সেখানেই    নৌকায় ভোট চাইব। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করায় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয় বলেও বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলীয় সভাপতি বলেন, আগামীদিনে নির্বাচন হবে। অবশ্যই আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। নৌকায় ভোট চাইতে হবে। সকলকে বলতে হবে এবং বোঝাতে হবে; একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই এদেশের মানুষ উন্নতি পায়। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছে আর দেশের উন্নতির ছোঁয়াটাও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই পেয়েছে। কাজেই এই কথাটা সকলকে বলতে হবে, যে আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই আর দেশের উন্নয়ন করার সুযোগ চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাটা ব্যাহত হয়েছে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে। যারা এর আগে ক্ষমতায় এসেছিল এবং যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছে এবং খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল তারা কখনো চায়নি বাংলাদেশ উন্নত হোক, বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হোক, বাংলাদেশের মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেয়ে থাকুক, তাদের একটু বাসস্থান হোক, তারা একটু চিকিৎসা সেবা পাক, শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নীত হোক- এগুলো এরা চায়নি। তাই যদি চাইতো তাহলে তো এ দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো। আওয়মী লীগ একমাত্র সংগঠন যা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া, তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে বাংলাদেশের উন্নতি হয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে, আমরা সরকার গঠন করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর নামে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, প্রিজাইডিং অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। ভোট ঠেকানোর নাম করে ভোটারদের ওপর অত্যাচার, কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়াসহ এমন কোনো তাণ্ডব নেই, যা বিএনপি-জামায়াত জোট করেনি। তার পরেও বাংলাদেশের মানুষ এটা প্রতিহত করেছে এবং ভোট দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ফলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাটা বজায় ছিল। আর এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বলেই আজকে আমরা উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা কিন্তু ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়েছি।  বিএনপির কাছে ভোগ-বিলাসী ক্ষমতা ছিল, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়া। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে। মানি লন্ডারিং, বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, লুটপাট, এটাই ছিল তাদের নীতি। যার ফলে বাংলাদেশ এগুতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা যেহেতু পাঁচ বছর মেয়াদি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করি এবং সেটা বাস্তবায়ন যখন শুরু করি- তখন আবার একটা দীর্ঘ মেয়াদি ১০ বছরের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা হাতে নেই। পরিকল্পনা নিয়ে না আগালে উন্নয়নের গতিটা ধরে আগানো যায় না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি আবার এসডিজি অর্জন করার জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। এই অল্প সময়ের মধ্যে আজকে বাংলাদেশ উন্নতি হওয়ার জন্য যে কয়টি উপাত্ত প্রয়োজন ছিল তা পূরণ করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা দেশকে উন্নত করতে পারছি। আমাদের সবসময় চিন্তা করতে হবে আমাদের স্বল্প সম্পদ নিয়ে কীভাবে আগাবো। তবে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা নিবো এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিবো। বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের প্রয়োজন তবে আমাদের নিজেদেরও সংগতি থাকতে হবে, কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয়, কারো কাছে ছোট হতে না হয়, কারো কাছে নতি স্বীকার করতে না হয়। আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি- এটাই হচ্ছে আমাদের নীতি, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতির মর্যাদা দাঁড় করাতে হবে। আমরা লক্ষ্য অর্জনে এখন এক ধাপ এগিয়ে, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মানুষের অভাব নেই। প্রতিনিয়ত তারা বলেই যাচ্ছে। তাদের উন্নয়ন চোখেই পড়ে না। চোখ না থাকলে তারা কীভাবে দেখবে। যারা বলে তারা বলে যাক, ওদিকে আমাদের কান দেয়ার সময় নেই। আমরা জানি কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হবে। আর সেটা জানি বলেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হচ্ছে গ্রাম থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আজকে গ্রাম-গঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া চোখে পড়ছে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে আমরা অনেক কাজ করতে পারি। যার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই অর্থ উপার্জনের পথ করে নিতে পারি। কিন্তু এদিকে কেউ কখনো দৃষ্টি দেয়নি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে সেতুবন্ধ করার দয়িত্বটা বাংলাদেশ নিতে পারে। সেখান থেকেই আমদের বিরাট অর্থনেতিক অর্জন হতে পারে। কিন্তু এগুলো কখনো কেউ সেভাবে বোঝেও নাই, ভাবেও নাই। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা অংশ নেন।
লুসি হল্টকে নাগরিকত্ব প্রদান: বাংলাদেশকে ভালোবেসে যুগের পর যুগ মানুষের সেবায় নিয়োজিত ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। শনিবার বিকালে লুসি হল্টের হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদটি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। ৮৭ বছর বয়সী লুসি জীবনের ৫৭ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশে; এদেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে ভুলে থেকেছেন পরিবারকে। মৃত্যুর আগে তার একটাই চাওয়া ছিল ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব’ শনিবার তিনি তা পেলেন। মানুষের সেবা করার জন্য ১৯৬০ সালে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে যোগ দেন লুসি। এদেশে এসে অক্সফোর্ড মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়ানো শুরু করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোর ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন তিনি। যুদ্ধের কারণে চার্চ বন্ধ করে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও যাননি লুসি হল্ট। যুদ্ধাহত মানুষদের সেবা দিয়েছেন তিনি। ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার আগে খুলনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় কাজ করেছেন লুসি হল্ট। অবসর জীবনে তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের শিশুদের মানসিক বিকাশ ও ইংরেজি শিক্ষা দিচ্ছেন। বাকি জীবনটা বরিশালেই কাটিয়ে দিতে চান লুসি। তার শেষ ইচ্ছা, মৃত্যুর পরে তাকে যেন বাংলাদেশের মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
অবসরকালীন ভাতা সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেলেন লুসি। কিন্তু প্রতি বছর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ৩৮ হাজার টাকা দেয়া তার জন্য কষ্টকর হচ্ছিল। চলতি বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি লুসি হল্টকে ১৫ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য তার ভিসা ফি মওকুফও করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করায় লুসি হল্টকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। গণভবনে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.