স্বামী-সন্তানসহ নিখোঁজ বিপাশা

নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলার ফ্লাইটে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন বলেন, বেলা সাড়ে ১২টায় তাদেরকে তুলে দেয়ার সময় সবশেষ কথা হয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। এরপর আর কোনো খবর পাচ্ছি না। একই ফ্লাইটে ছিলেন, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসি দম্পতি। ওই ফ্লাইটে করে নিজ দেশ নেপালে ফিরছিলেন সিলেটের রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ শিক্ষার্থী। ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর ওই বিমানের যাত্রীদের স্বজনরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। তাদের পরিবারে কান্নার রোল পড়ে। কেউ কেউ বিমানবন্দর ও ইউএস বাংলার কার্যালয়ে ভিড় করেন তাদের স্বজনের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেন। বিপাশা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সংস্থার সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত ৫০ জন নিহতের খবর পাচ্ছি, হাসপাতালে রয়েছে বাকিরা। বিপাশার পরিবারের বিষয়ে আমরা নেপালেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কোথাও থেকে কোনো খবর পাচ্ছি না।  খুবই চিন্তিত। জানি না, ভাগ্যে কী ঘটেছে, আমরা প্রার্থনা করছি; ভালো খবরের আশায় রয়েছি। এক সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ?রিমু। এখন তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। রাত ৮টায় ‘নেপাল-বাংলাদেশ মেডিক্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে সানজিদা বিপাশার একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ওই মহিলা ও তার সন্তান দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রাজশাহীর রুয়েটের সিএসই বিভাগের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসিও ছিলেন এই ফ্লাইটে। স্বামী রকিবুল হাসানও ছিলেন তার সঙ্গে। হাসির বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি যাত্রা শুরুর আগে ফেসবুকে লিখেছেন- ‘ভ্যাকেশন স্টার্টস নাউ’। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে হাসি ও রকিবুলের স্বজনরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং বেগম উম্মে সালমাও ছিলেন এই ফ্লাইটে। তারা একটি কর্মশালায় অংশ নিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পিয়াস রায়ও এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রা শুরুর একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘টাটা মাই কান্ট্রি, ফর ফাইভ ডেজ। হেইলিং টু দ্য ল্যান্ড অফ দ্য এভারেস্ট’। গাজীপুরের বাসিন্দা অ্যানি প্রিয়কও সপরিবারে এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রাকালে এয়ারপোর্ট থেকে তার ফেসবুকে ছবিও দিয়েছিলেন তিনি। শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামের প্রিয়কের সঙ্গে তার বন্ধু মেহেদী হাসান দম্পতিও এই ফ্লাইটে ছিলেন বলে তাদের বন্ধু ফরহাদ খান জানিয়েছেন। ফরহাদ বলেন, ফারুকের (প্রিয়ক) সঙ্গে তার স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি (২৫), তাদের ৩ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান এবং মেহেদী হাসান অমিও (৩৩) ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা (২৫) ছিলেন। এদের মধ্যে কামরুন্নাহার স্বর্ণা, ইমরানা কবির হাসি আহত অবস্থায় কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে সন্ধ্যায় ঢাকায় ইউএস বাংলার কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে। পেশায় আলোকচিত্রী ফারুক প্রিয়ক নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন আলোকচিত্রী। মেহেদী পেশায় ব্যবসায়ী। রাত ৮টায় এ্যানির বোন ফাহমিদা শ্রাবন্তী ফেসবুক পোস্টে জানান, তার বোন এ্যানি প্রিয়ক ও বোনজামাই এফএইচ প্রিয়ক বেঁচে আছেন। তবে তার ভাগ্নির খোঁজ তখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.