বিমানটিতে ছিলেন রাগীব-রাবেয়ার ১৩ শিক্ষার্থী by ওয়েছ খছরু

নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার ফ্লাইট দুর্ঘটনায় সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই ফ্লাইটে মেডিকেল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী ছিল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সমাপ্ত করার পর তারা গতকাল ছুটি কাটাতে নিজ দেশ নেপালে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন কলেজের সংশ্লিষ্টরা। ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছে ৪ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তবে- সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি কলেজের সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে বিপুলসংখ্যক নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এ কলেজে অধ্যায়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারে পড়ালেখা শেষ করেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১৩ শিক্ষার্থী গতকাল দুপুরে ইউএস বাংলার ওই ফ্লাইটে নিজ বাড়ি নেপালে যেতে সিলেট ছাড়েন। তারা ঢাকা হয়ে যাচ্ছিলেন বাড়িতে। গতকাল বিকালে কাঠমুন্ডুতে ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার খবর সিলেটে পৌঁছামাত্র শোকের ছায়া নেমে আসে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে। কলেজটির প্রিন্সিপালসহ সংশ্লিষ্টরা খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। এরমধ্যে তারা জানতে পারেন ইউএস বাংলার ওই ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু যাচ্ছিল তাদের ১৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১১ জন মেয়ে ও দুইজন ছেলে বলে জানিয়েছেন সিলেটের রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। তিনি জানান- এ হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। ছুটি কাটাতে তারা বাড়ি যাচ্ছিল বলে তারা জেনেছেন। এবং দুর্ঘটনা কবলিত ইউএস বাংলার ওই ফ্লাইটে তারা ছিলেন বলে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে- সন্ধ্যা ৭টায় এ নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মো. আবেদ হোসাইন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- তাদের কলেজে প্রায় আড়াইশজন নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। যে ১৩ জন শিক্ষার্থী মিসিং রয়েছে তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটি আমরা জানি না। তবে- ওই ফ্লাইটে তারা কাঠমুন্ডু যাচ্ছিল। তারা সবাই ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানান অধ্যক্ষ। এদিকে- রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে রাতে ওই ১৩ শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছে- সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, পূর্ণিমা লোহানি, শ্রেতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল, শামিরা বেনজারখার, আশ্রা শখিয়া ও প্রিঞ্চি ধনি। এদিকে- সিলেটের রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে- বিমান দুর্ঘটনায় তাদের ১৩ জন শিক্ষার্থীই মারা গেছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিংবা তার পরিবার কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। ওদিকে- রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ গতকাল রাতে এ ঘটনায় তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ইউএস বাংলার সিলেট অফিসের কর্মকর্তা লিমন আহমদ জানিয়েছেন- সিলেটের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। তারা বাড়ি যেতে হলে ইউএস বাংলায় কাঠমুন্ডু যান। ওই ফ্লাইটে কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল বলেও তারা জেনেছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা.  মৈত্রেয়ী দেব তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- পরশু আঞ্জিলার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলছিলো, ‘ম্যাডাম এক্সাম শেষ, আশীর্বাদ করবেন। আমরা বাড়ি যাবো।’ আমি বলেছিলাম, ‘ডাক্তার হয়ে কিন্তু দেখা করো। আমি টিউটোরিয়াল টিচার ছিলাম। তাই নিগা, আঞ্জিলা, প্রিন্সি ছিলো আমার কাছে মেয়ের মতো। শেষ ক্লাসের দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েগুলো কাঁদছিলো। যখনই দেখা হতো হাসিমুখে জড়িয়ে ধরতো। কি যে কষ্ট হচ্ছে। ভগবান সবাইকে রক্ষা করো।’

No comments

Powered by Blogger.