বাইরে খলনায়ক ঘরে নায়ক

দেশের বাইরে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বড় শত্রু হিসেবে বিবেচিত হলেও দেশের জনগণের কাছে নায়ক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমের কাছে তিনি শত্রু। কারণ প্রতিবেশী দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন তিনি। অন্য দেশের নির্বাচনে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। থেকে থেকে রণহুঙ্কার দেন। এমন সব অস্ত্র থাকার কথা জানান দেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। পশ্চিমের সাময়িকীগুলোর প্রচ্ছদচিত্রে টার্মিনেটরের সেই ভয়ালদর্শন চেহারার রোবট, হিটলার বা ব্যাটম্যানের চেহারা পুতিনের সঙ্গে মেলানো হয়েছে। ঠিক একই কারণে দেশে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থেকে বিরুদ্ধবাদীদের নির্মূল করেছেন পুতিন। দেশের গণমাধ্যমের ওপর আরোপ করেছেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এতসব কারণে পশ্চিমাদের চোখে খলনায়ক হলেও দেশের জনগণের কাছে নায়কের মর্যাদায় আসীন পুতিন। ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়ার জনগণের মধ্যে তরুণরাই পুতিনের সবচেয়ে বড় ভক্ত। ২০ বছর বয়সী সাংবাদিকতার ছাত্রী ইয়েক্যাটরিনা মামায় বলেন, একজন রুশ মনে মনে যেটা চায়, সেটা হচ্ছে দেশে এমন একজন শক্তিশালী রাজনীতিক থাকুক যার সঙ্গে রাশিয়ার সাবেক জারের মিল থাকবে। ১৮ মার্চ রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সাংবাদিকতার ছাত্রী মামায় জানেন, তার দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা মুক্ত নয়, তারপরও তিনি পুতিনকেই আবার ভোট দেবেন। পশ্চিমাদের চোখে মামায়ের মতো রাশিয়ার তরুণরা একটা স্ববিরোধিতার মধ্যে বসবাস করছেন। পশ্চিমাদের মতে, এ তরুণদের স্ববিরোধিতাই পুতিনকে ক্ষমতা আকড়ে থাকতে সহায়তা করছে। একজন উঠতি ব্যবসায় উদ্যোক্তা ১৮ বছর বয়সী দিমিত্রি সবুরভ পুতিন সম্পর্কে বলেন, আপনার উপলব্ধি হবে, তার সঙ্গে থাকাটাই আপনার জন্য শ্রেয়। আপনার কোনো অভিযোগ থাকবে না। আর ১৫ বছরের পর আপনি কোনো প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।’ রাশিয়ার লাখ লাখ মানুষের কাছে পুতিন হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি ১৯৯০-এর দশকের সেই টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে দেশে স্থিতিশীলতা এনেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর নাকাল অবস্থা থেকে মস্কোকে বিশ্বদরবারে স্থায়ী আসনে বসিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কনস্ট্যানটিন কালাশেভ বলেন, ‘পুতিন হচ্ছেন আয়নার মতো। আপনি যা-ই চান, তার মধ্যে দেখতে পারেন।’ কালাশেভ বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, তিনি রাশিয়াকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছেন। তিনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। অনেকেরই ধারণা, তিনি জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছেন। পেনশন সঠিক সময়ে পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।’ দেশের বাইরে পুতিনের ভাবমূর্তি নিয়ে কালাশেভ বলেন, ‘পশ্চিমে তিনি যখন শত্রু, এর অর্থ হচ্ছে তিনি ঝানু রাজনীতিক। তারা তাকে ভয় পায়। এর অর্থ হল তারা তাকে শ্রদ্ধা করে।’ এএফপি এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়ার সোভিয়েত-উত্তর যুগের জার হয়ে উঠেছেন পুতিন। আগামী রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমেই তিনি শাসনকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত করার সব ব্যবস্থায় করে ফেলেছেন। এখন থেকে ঠিক ১৮ বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর ৬৫ বছর বয়সী সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন সমগ্র রুশ সমাজকে ক্রেমলিনের প্রভাব বলয়ে নিয়ে এসেছেন। তার শাসনামলে তিনজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.