নেপালের নির্বাচন by এম সাখাওয়াত হোসেন

নেপালে ২৪০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান হয় এপ্রিল ১০, ২০০৮ সালে। ওই বছরই নেপালের ইতিহাসে প্রথম বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের সংবিধান রচনায় গণপরিষদ গঠনের জন্য। নির্বাচন হয়েছিল ৫৭৫টি আসনে। এ উপমহাদেশে নেপালই প্রথম দেশ যেখানে মিশ্র নির্বাচনীপ্রক্রিয়া তথা মিক্সড ইলেক্টোরাল সিস্টেম, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট এবং আনুপাতিক হারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনীব্যবস্থা এখন নেপালে সাংবিধানিকভাবে অনুসৃত। ওই গণপরিষদের মেয়াদ বাড়ানোর পরও নানা কারণে সংবিধানের কাজ শেষ না হওয়াতে চার বছর পর ২০১২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো গণপরিষদ নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণপরিষদের জন্য ২৬টি আসনে সরকারের বিশেষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় একদিনে, যা পর্যবেক্ষণ করতে আমি আর ছহুল হোসেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলাম। যদিও নেপালের নির্বাচন কমিশন ১৯৫১ সালে গঠিত হয়েছিল, তবে বিশুদ্ধ সংসদীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ২০০৮ সালেই প্রথম। ওই নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন সাবেক সচিব ভোঙ্গরাজ পোখারেল। ওই নির্বাচন ছিল ‘পোস্ট-কনফিল্কট’ তথা সঙ্ঘাত-উত্তর সময়ের নির্বাচন। নেপালের ২০ বছরের মাওবাদী ‘ইনসারজেন্সি’ পরবর্তী নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ‘মাওবাদী’ নেতা, এককালের গেরিলা নেতা পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচন্ড’ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। প্রথম গণপরিষদে প্রায় ২৬টি দলের উপস্থিতি ছিল। এত বড় সংখ্যক দলের সংসদে থাকার কারণ ছিল মিশ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা। যেখানে ছোট ছোট দল আনুপাতিক হারে আসন পেয়েছিল। দ্বিতীয় গণপরিষদ নির্বাচনেও প্রায় একই রকম ফলাফল হয়। তবে ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মাওবাদীরা তৃতীয় বৃহত্তর দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় গণপরিষদে ২৯ দল আসন পায়। বেশির ভাগ দলই একটি করে আসন পাওয়াতে সংবিধান রচনায় এবং সরকারের স্থিতিশীলতায় দারুণ সমস্যার সৃষ্টি হওয়া সত্তে¡ও ২০১৫ সালে সংবিধান রচনা শেষ করে কার্যকর করা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের দু’টি গণপরিষদ নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত করতে নেপালের নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থাপনায় যে জটিল অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সে প্রেক্ষাপটে হালের নির্বাচন দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে অনুষ্ঠিত হয় নতুন সৃষ্ট প্রাদেশিক নির্বাচনও। এটাও একটি কারণ ছিল দুই পর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনে। নেপালের সংবিধানে দুই কক্ষের বিধান রয়েছে। এর একটি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ অন্যটি ফেডারেল পার্লামেন্ট বা ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ২৭৫টি আসন। এর মধ্যে সংবিধানের ৮৪ ধারার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৫টি আসন সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সরাসরি- (FPTP), ১৬৫ সংসদীয় নির্বাচন আসন থেকে এবং ১১০টি আসনে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের বিধান করা হয়েছে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সমগ্র দেশটিকে একক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মানে এ যে, ১১০ জন সংসদ সদস্য পার্টিভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন, তবে কোনো বিশেষ সংসদীয় এলাকাকে প্রতিনিধিত্ব করবেন না, যেমনটা করবেন ১৬৫ জন। নেপালে মিশ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিধান রাখার কারণ যাতে বহুজাতিক দেশটির পিছিয়ে পড়া জাতি-গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারেন। এ বিষয়টি সংবিধানের ৮৪(২) এ নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে ‘দলিত’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, খাস আরিয়া (খাস আরিয়া মানে, Ksheri, ব্রাহ্মণ, ঠাকুর, সন্ন্যাসী) মাদহেসি থারু মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত রাখা অপরিহার্য। অপর দিকে, মুসলিম এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়েছে আনুপাতিক হারের ১১০ জন সদস্য নির্বাচনে। এদের সদস্য নির্ভর করবে জনসংখ্যা অনুপাতে। আনুপাতিক হারের নির্বাচনে প্রতিবন্ধীদের সদস্য করার বিধানও রাখা হয়েছে। নেপালের সংবিধানের ৮৪(৬) ধারা মোতাবেক একজন প্রার্থীর একাধিক সংসদীয় আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রত্যেক পার্টি থেকে এক তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধির মনোনয়ন দেয়া বাধ্যতামূলক। নেপালের উচ্চকক্ষ মোট ৫৬ জন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে অবশ্যই একজন দলিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং প্রতিবন্ধী নারী থাকার বিধান রয়েছে।
এ উচ্চকক্ষ নির্বাচিত হবে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। যার ভোটার হবেন প্রভিনশিয়াল অ্যাসেম্বলির সদস্য, চেয়ার ও ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাম বোর্ড এবং পৌরসভার মেয়র ও উপমেয়ররা। নেপালের প্রথম গণপরিষদ নির্বাচন ‘পোস্ট কনফিলক্ট’ বা ‘সঙ্ঘাত উত্তর’ নির্বাচন হিসেবে যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ছিল। দ্বিতীয় গণপরিষদ নির্বাচনের (২০১৩) ফলাফল নিয়ে মাওবাদীরা আন্দোলন করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও পরে তা গ্রহণ করেছিল। ওই নির্বাচনে মাওবাদীরা তৃতীয় দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে একপর্যায়ে জোট হিসেবে ‘প্রচন্ড’ প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি আমাকে বলেছিলেন, যদিও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মাওবাদীদের আপত্তি ছিল, তবুও নেপালের গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি ফলাফল মেনে নিয়েছিলেন। ওই সময়ে তিনি গঠিত জোটের প্রধানমন্ত্রী। বিগত দু’টি গণপরিষদে এত সংখ্যক দলের উপস্থিতি নেপালের সরকার গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা হয়েছিল। এ সমস্যা দূর করতে আনুপাতিক হারের (ক্লোজড লিস্ট পিআর : Closed List) নির্বাচনে ৩ শতাংশ ন্যূনতম প্রাপ্ত ভোট নির্ধারণ করে ২০১৭ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ একটি দলকে আনুপাতিক হারের নির্বাচনে একটি আসন পেতে হলে ন্যূনতম পক্ষে মোট প্রদত্ত ভোটের তিন শতাংশ ভোট পেতে হবে। এ ‘ন্যূনতম ভোট প্রাপ্তি’ মূলত দু’টি কারণে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত : সংসদে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে এবং দ্বিতীয়ত : ন্যূনতম একটি আসন প্রাপ্ত দলকে জাতীয়পর্যায়ের দল হিসেবে নিবন্ধিত করার জন্য। প্রায় আনুপাতিক হারের এ পদ্ধতিও খুব সহজ নয়। এই ‘ক্লোজড লিস্ট’ পদ্ধতিতে প্রত্যেক দলকে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর ক্রমানুসারে আগেই নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয় এবং ওই তালিকা থেকেই ক্রমানুসারে প্রার্থী নির্বাচিত হয়। তবে ভোটারেরা শুধু পার্টিকেই তাদের ভোট দেন। নেপালের মিশ্র পদ্ধতির নির্বাচনে একজন ভোটারকে একাধারে দু’টি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে হয়েছে। আনুপাতিক হারের ব্যালট সঙ্গতকারণেই বেশ বড় এবং শুধু পার্টির নির্বাচনী মার্কা থাকে। যে কারণে ভোটাররা প্রার্থীর নামও জানতে পারেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ফলাফল ঘোষিত না হয়। ক্লোজড লিস্ট আনুপাতিক হারের এ ব্যবস্থা নেপালে এখনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি তবে এ ধরনের আনুপাতিক হারের অন্যতম নেতিবাচক দিক হলো, চূড়ান্ত সদস্য নির্বাচন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের পছন্দ অপছন্দের ওপরে বর্তায়। এ ধরনের প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলপর্যায় হতে প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে দলগুলো প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করলে ক্লোজড লিস্ট আনুপাতিক হার প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করা যায়। নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সে পদ্ধতি ধারণ করেনি। নেপালের নির্বাচন কমিশনের কাজ এই উপমহাদেশের যেকোনো নির্বাচন কমিশনের চাইতে পদ্ধতিগত কারণে জটিল। ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক আঙ্গিকেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সহজ নয়। নেপালে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অভিজ্ঞতা বেশি দিনের নয়, ফলে ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত যে কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নেপালে এবং নেপালের বাইরেও যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ধারাবাহিকতার কারণে নেপাল বহুজাতিক দেশ এবং বিগত ২০ বছরের সঙ্ঘাতের তিক্ত অভিজ্ঞতা উৎরিয়ে একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে অন্তত এ পর্যন্ত সক্ষম হয়েছে। নেপালের সংবিধানোত্তর প্রথম নির্বাচনও যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৭ সালে নির্বাচনে মোট তিনটি জোট, মাওবাদী দল কেপি শর্মা ওলির মার্কিস্ট-লেনিনিস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জোট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। অপর দু’টি জোট নেপালি কংগ্রেসের সাথে দক্ষিণপন্থী কয়েকটি জোট দল নিয়ে জোট এবং বাবুরাম ভট্টরাইয়ের, এককালের মাওবাদী নেতা, নেতৃত্বে ‘নয়া শক্তি’ পার্টির সাথে ডেমোক্র্যাটিক গোর্খা দলের। তবে বামপন্থী জোট মাওবাদী ও মার্কিস্ট-লেনিনিস্টরাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কে পি শর্মা ওলি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এ জোটের অন্যতম শরিক মার্কসিস্ট লেনিনিস্টরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে এবং মাওবাদীরা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। অপর দিকে, নেপালি কংগ্রেস বেশ পেছনে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে বিরোধী দল হয়ে থাকবে। এ দুই জোটই নির্বাচনের উভয় ব্যবস্থাপনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অপর দিকে, পিআর পদ্ধতিতে ‘ওয়াটার মার্ক’ একটি দলের সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা পূর্বনির্ধারণ পদ্ধতি এবং ন্যূনতম ভোটের শতাংশ নির্ধারণ করায় ১১০টি পিআর সংসদীয় পদের জন্য মাত্র ৪৫টি দল নিবন্ধন করেছিল, যা বিগত দু’টি গণপরিষদ নির্বাচন থেকে অনেক কম। সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট প্রায় দুই মাস অপেক্ষায় থাকার পর ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এত দেরি হওয়া সত্ত্বেও নেপাল শান্ত এবং রাজনীতিবিদরাও তাদের পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করেন। ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কোনো উদ্বেগ ছিল না। নেপাল অবশ্যই অনেক উঠতি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে। যেমনটা আগেই বলেছি, নেপালের নির্বাচনী পদ্ধতি উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোর চাইতে বেশ জটিল। অবশ্য এর প্রধান কারণ নেপালের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলোতে বহুজাতীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা। ভৌগোলিক বিন্যাসের কারণেও প্রশাসনিক দিক থেকেও নেপালের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বেশ কঠিন যদিও রেজিস্টার্ড ভোটার মাত্র ১৫ মিলিয়ন। যা হোক, উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ নেপাল, যেটি উত্তরে চীন এবং তিন দিকে ভারতবেষ্টিত। নেপালের বিগত নির্বাচনগুলো ছিল সর্বদলীয়, যা বহুদলীয় গণতন্ত্রে অন্যতম শর্ত। অতীতের দু’টি এবং ২০১৭ সালের গণতান্ত্রিক সংবিধানের আওতায় প্রথম জাতীয় এবং প্রাদেশিক সংসদীয় নির্বাচন যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠিত করার জন্য নেপালের নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জনগণকে অভিনন্দন। আশা করা যায়, এ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী নেপাল সরকারে স্থিতিশীলতা অর্জন করবে, যা সহায়ক হবে নেপালের গণতন্ত্রের ভিত শক্ত হতে। নেপালের ২০ বছরের রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাতপরবর্তী নির্বাচনগুলো থেকে উঠতি গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে।
লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:), সাবেক নির্বাচন কমিশনার
hhintlbd@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.