বহুমুখী দূষণের কবলে ঢাকা

নানামুখী দূষণের কবলে পড়ে ক্রমেই বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে রাজধানী ঢাকা মহানগরী। অথচ বিষয়টিতে ভালোভাবে নজর দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, পরিবেশকে বিষিয়ে তোলার জন্য দায়ী পানি, বাতাস ও শব্দদূষণ ঢাকায় এত বেশি বেড়েছে যে, তা সহনীয় মাত্রার চেয়ে দুই-তিন গুণ ছাড়িয়েছে। এ কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ, মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, এমনকি হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এছাড়া খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকসহ নানা সমস্যা তো রয়েছেই। এ অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে এবং মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতা ও জীবনযাত্রা ঠিক রাখতে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। জানা যায়, অনেকদিন ধরেই ঢাকার বাতাস বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিসাযুক্ত। এতে প্রতিদিন ১০০ কেজি সিসা, দেড় টন সালফার ডাইঅক্সাইড ও ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইড মিশছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাতে ও দিনে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ৯৫, ৯৬, এমনকি ১১৪ ডেসিবল ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং সর্বনিু মাত্রা থাকছে ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবলের মধ্যে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, গানের কনসার্ট ও রাজনৈতিক সমাবেশের সময় এটি যে আরও বেড়ে যায়, তা সহজেই অনুমেয়।
অথচ পরিবেশ অধিদফতরের বিধি অনুযায়ী রাতে শব্দের মাত্রা সর্বনিম্ন ৪০ ও সর্বোচ্চ ৭০ ডেসিবল। এ অবস্থায় ৮ ঘণ্টা করে ৬ মাস কাজ করলে যে কোনো মানুষ বধির হয়ে যেতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় অধিকাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি মারাত্মক হ্রাসের বিষয়টি তা-ই প্রমাণ করে। ঢাকার পানিদূষণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই। নদী-খাল-বিল ও বিভিন্ন লেকের পানির দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। ২০১৪ সালে বুয়েট জানিয়েছে, যেখানে পানিতে বিওডির সহনীয় মাত্রা ৫০ মিলিগ্রাম, সেখানে একটি খালে এটি ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে। ওয়াসার পানি অনেক সময় ধরে ফোটানোর পরও খাওয়ার উপযোগী হওয়া তো দূরের কথা, কোনো কোনো এলাকায় সেগুলো থেকে দুর্গন্ধই দূর হয় না। জারের বিশুদ্ধ খাবার পানি বলে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোও পানের উপযোগী নয় বলে বিভিন্ন সমীক্ষা-প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। ফলে পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে পানি, বাতাস ও শব্দদূষণের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.