প্যারাডাইস পেপারসে আরও ২০

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) সম্প্রতি ‘প্যারাডাইস পেপারসে’র দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ ২০ বাংলাদেশির নাম এসেছে, যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের মাল্টাতে অর্থ পাচার করেছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছিল সংগঠনটি, যেখানে ১০ বাংলাদেশির নাম ছিল। এছাড়া এ সংগঠন ২০১৬ সালের এপ্রিলে ‘পানামা পেপারস’ নামে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে অন্তত ৫২ বাংলাদেশির নাম ছিল। তার মানে সব মিলিয়ে সংগঠনটির প্রকাশিত অর্থ পাচারের তালিকায় এ পর্যন্ত ৮২ বাংলাদেশির নাম উঠেছে, যারা মূলত কর ফাঁকি দেয়ার জন্য করস্বর্গ হিসেবে খ্যাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন। আইসিআইজের কাছ থেকে প্যারাডাইস পেপারস নামের এসব নথি পেয়েছে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক। নথিগুলো বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন নাম। এ ধারাবাহিকতায় প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির সঙ্গে আরও বাংলাদেশির নাম যুক্ত হয় কিনা, এটাই এখন দেখার বিষয়। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ সম্ভব নয়। কাজেই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা অর্থ পাচারকারী- এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর কথা বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৬ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলেও অদ্যাবধি তা শেষ করতে পারেনি দুুদক। কাজেই এ দফায় প্যারাডাইস পেপারস সংক্রান্ত তদন্ত কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। জনগণের আস্থা অটুট রাখতে হলে দুদককে অবশ্যই তার কর্মদক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। টাকা পাচারসহ দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে, এর মূলোৎপাটন জরুরি।
শুধু প্যারাডাইস বা পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নয়- মালয়েশিয়া, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশি বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। পুঁজি পাচারের ঘটনা ঘটে মূলত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে। দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসে। উদ্বেগের বিষয় হল, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এ কারণেই টাকা পাচার হচ্ছে বেশি। টাকা পাচারের আরেকটি বড় কারণ দুর্নীতি। বিদেশে অর্থ পাচার একটি বড় অপরাধ। এজন্য শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপরও টাকা পাচারের ঘটনা কেন বন্ধ হচ্ছে না, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অভিযোগ রয়েছে, টাকা পাচারের বিষয়টি সরকার অবহিত থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না- কারণ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়-স্বজন অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নীতি-নৈতিকতা ও দেশপ্রেম ভুলে বিদেশে অর্থ পাচার করছে, যার প্রায় সবটাই অসৎ উপায়ে অর্জিত। বিদেশে অর্থ পাচার রোধে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ লক্ষ্যে দুদক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.