বিক্ষোভ ঠেকাতে টাকা ঢালে সৌদি রাজপরিবার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই বিক্ষোভ-বিদ্রোহ দেখা গেলেও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে সৌদি আরবে সাম্প্রতিককালে গণআন্দোলন বা বিক্ষোভের ঘটনা দেখা যায় না। পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অস্থির এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও সৌদি আরব কেন বিক্ষোভ-বিদ্রোহ থেকে মুক্ত। ২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’-এর ঢেউ আছড়ে পড়ে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যার প্রভাবে বেশ কয়েকটি দেশের শক্তিশালী একনায়কতান্ত্রিক সরকারেরও পতন হয়েছে। তবে আরব বসন্ত রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের সীমান্ত পেরোয়নি। ১৯৩২ সাল থেকে দেশটি শাসন করে আসছে সৌদি রাজপরিবার। গত ৮৬ বছর ধরে এ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ হয়নি। সম্প্রতি তিউনিসিয়া থেকে শুরু করে ইরান পর্যন্ত খাদ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বেকার সমস্যা ও খারাপ জীবনযাত্রার মান প্রভৃতির জন্য নিয়মিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাচ্ছে। উপরোক্ত কারণগুলো যদি জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে আনে তাহলে সৌদি কেন এমন প্রবণতা দেখা যায় না? সম্প্রতি দেশটি প্রথমবারের জন্য তার জনগণের ওপর ভ্যাট বা কর আরোপ করেছে। জ্বালানি ও খাবারের জন্য যে ভর্তুকি তাও কমানো হয়েছে। বেকারত্বের হারও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর পরও দেশটিতে তেমন জনরোষ পরিলক্ষিত হয় না। সৌদি জনগণ কেন বিক্ষোভ করে না তার কারণ হিসেবে সৌদি গেজেট এক প্রতিবেদনে বলেছে, সৌদি আরব ও আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ ইরানের চেয়ে অনেক ভালো। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপসাগরীয় দেশগুলো নাগরিকদের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দেশগুলোর প্রত্যেকটি আইন, প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত দেশের নাগরিকদের জন্য সুরক্ষামূলক বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সৌদি আরবের সাম্প্রতিক রয়্যাল ডিক্রির উদাহরণ দিয়ে সৌদি গেজেট বলেছে, জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।
সরকার দেশের কম সুবিধাপ্রাপ্ত প্রায় ১ কোটিরও বেশি নাগরিককে সরাসরি আর্থিক সহায়তার আওতায় এনেছে। এ সুবিধাপ্রাপ্তদের সংখ্যা দেশটির মোট ২ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকরও বেশি। পণ্যের উচ্চমূল্য থেকে সুরক্ষা দিতে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সব সরকারি কর্মচারীর আর্থিক ভর্তুকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যাংক ও বড় বড় কোম্পানি বাদশার এ নীতির অনুসরণ করে বেতন বাড়িয়েছে। দেশে ও বিদেশে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা মাসে মাসে বেতন পাচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানার স্কুল ও হাসপাতালের ভ্যাট মওকুফ করা হবে। এছাড়া কোনো নাগরিকের প্রথমবার বাড়ি কেনার জন্য কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে কলেজ পর্যন্ত এবং সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা রয়েছে। প্রতিবেদন মতে, ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদি সীমান্ত সুরক্ষায় মোতায়েন সেনাদের প্রতি বছর ৫ হাজার রিয়াল বোনাস দেয়া হয়। এছাড়া বার্ষিক বেতনও বাড়ানো হয়েছে যেটা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে। বেকার সমস্যা প্রকট হওয়ায় বেকারদের চাকরির ব্যাপারে নতুন নীতিমালা গ্রহণ হয়েছে। যতদিন তারা চাকরি না পাবে, ততদিন সরকারের পক্ষ থেকে বেতন, বিনামূল্যে শিক্ষা, প্রতিক্ষণ ও সামাজিক পরিষেবা পাবে। সৌদি শিক্ষকদের গড় মাসিক বেতন ৭ হাজার ৫০০ রিয়াল (১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রায়)। বাড়ি ও গাড়ি কিনতেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয় তাদেরকে। কোনোভাবে তাদের বাড়ি ও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সরকার তাদেরকে অস্থায়ী বাড়ি দেয়।

No comments

Powered by Blogger.