স্থগিত ডিএনসিসি নির্বাচন

মনোনয়নপত্র জমার চূড়ান্ত তারিখ শেষ হওয়ার আগেই আদালতের রায়ে তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদের উপনির্বাচন এবং ১৮টি ওয়ার্ড ও ৬টি সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা করায় ভোটগ্রহণ স্থগিতের দায় এড়াতে পারে না নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, ডিএনসিসির মেয়র পদের উপনির্বাচন এবং উত্তর ও দক্ষিণ- দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। কিন্তু এতে কিছু বিষয় যেমন- নতুন যুক্ত হওয়া এলাকার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন নির্বাচিত হবেন এমন কাউন্সিলরদের মেয়াদ জটিলতা, এমনকি ওইসব এলাকায় বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার হিসেবে নির্বাচিতদের বাকি মেয়াদের কী হবে, তার মীমাংসা করা হয়নি।
এর ফলে যে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন মহল থেকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পরও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে তাড়াহুড়োর সঙ্গে তফসিল ঘোষণা করা হয়। অথচ এখন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরস্পরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলার দায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়। একইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার পুরনো অভিযোগটি এখানে আবার নতুন করে হাজির হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসি ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইচ্ছা করে জেনেশুনেই দুই সিটির নতুন এলাকার কাউন্সিলর এবং উত্তরের মেয়র পদের উপনির্বাচনকে আইনি জটিলতায় ফেলেছে। এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তফসিল ঘোষণা, যাদের নির্বাচিত করা হবে তাদের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট না করে নির্বাচন এবং নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ করতে না দেয়া যে জটিলতা সৃষ্টি করবে, তা ইসির বুঝতে না পারার কথা নয়।
এতে করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। আদালতের আদেশে তিন মাসের জন্য ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে। এখন এ সময়ের মধ্যে সব সমস্যার সুরাহা করে নগরবাসীকে তাদের মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনের অধিকার দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন নির্দিষ্ট সময়- তিন মাসের বাইরে ভোটগ্রহণ জটিলতা দীর্ঘায়িত না হয়, ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সচেতন থাকতে হবে যেন নিজেদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে তাদের দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা কোনোভাবেই প্রশ্নের মুখে আর না পড়ে। অস্পষ্ট ও আইনি দুর্বলতা আছে এমন বিষয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং পারস্পরিক সমন্বয় না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না- এটিই হোক নির্বাচন স্থগিতের শিক্ষা।

No comments

Powered by Blogger.