তুরস্কের সামরিক অভিযান শুরু, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৃষ্ট উত্তেজনার ভেতরে তুরস্ক বলেছে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আফরিন শহরে তাদের সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে এবং রাশিয়া সেখান থেকে তাদের সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছে। আফরিন এলাকাটি মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ার কুর্দি গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরটিতে তুর্কি অভিযানের বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুসওগলু বৃহস্পতিবার বলেছেন, তার দেশের সেনাপ্রধান আসন্ন বিমান হামলা নিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধানের সাথে আলোচনা করার জন্য মস্কো গেছেন।
কাভুসওগলু জানান, আফরিনে বিমান হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন লাভের অংশ হিসেবে তুর্কি চিফ অব স্টাফ হুলুসি আকর মস্কো সফর করছেন। এ ছাড়া আফরিনে রুশ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমরা একটি সামরিক অভিযান চালাব তখন তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন যাতে রুশ বিশেষজ্ঞদের ওপর কোনো প্রভাব না পড়ে।’ তিনি জানান, ইরান ও রাশিয়ার আকাশসীমা নিয়েও আংকারা আলোচনা করছে। তবে সিরিয়ার আফরিন শহরে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়ে তুরস্ককে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নয়ের্ত বৃহস্পতিবার আংকারার প্রতি আহন জানিয়ে তার ভাষায় বলেছেন, এ অঞ্চলে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব দিতে হবে। আফরিন এলাকায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য তুরস্ক প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন খবরের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নয়ের্ত বলেন, ‘আমরা তুরস্ককে এ ধরনের অভিযান না চালানোর আহŸান জানাব। আমরা চাই না তারা সেখান কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক বরং আমরা চাই তারা দায়েশের বিরেুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব দিক।’ তুরস্ক স¤প্রতি বলেছে, তুর্কি সীমান্তে সিরিয়ার ভেতরে যদি কুর্দি গেরিলাদের মোতায়েন করা হয় তাহলে তুরস্কের সেনারা সেখানে অভিযান চালাবে এবং তা শুধু আফরিন এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং তা মানবিজ শহর এমনকি ফোরাত নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তুর্কি সরকার সিরিয়ার কুর্দি গেরিলাদের শত্র মনে করে এবং তুরস্কের পিকেকে গেরিলাদের সাথে সিরিয় কুর্দি গেরিলাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করে।
তুরস্কের এ বক্তব্যের জবাবে সিরিয়ার সরকার বলেছে, তুর্কি বাহিনী সিরিয়ার ভেতরে অভিযান চালালে দামেস্ক পাল্টা ব্যবস্থা নেবে এবং তুর্কি বিমান ভূপাতিত করার জন্য সিরিয় বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ তুরস্ককে সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের হামলা প্রতিহত করতে তার দেশের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। নিজেদের ভূখণ্ড দিয়ে উড়ে যাওয়া তুর্কি যুদ্ধবিমানকে সিরিয়া ‘ধ্বংস’ করে দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেয়, সিরিয়া-তুর্কি সীমান্তে ৩০ হাজার প্রশিক্ষিত বর্ডার গার্ড মোতায়েন করবে পেন্টাগন। মার্কিন এ বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এসব সন্ত্রাসী বাহিনী মোতায়েন কোনো সুখকর কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি সীমান্তে কুর্দি গেরিলাদের মোতায়েন করে তাহলে আঙ্কারা সিরিয়ার আফরিন ও মানবিজ এলাকায় অভিযান চালাবে। অবশ্য, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বৃহস্পতিবার ওই বিবৃতি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সিরিয়া-তুর্কি সীমান্তে এ ধরনের কোনো বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা তাদের নেই।

No comments

Powered by Blogger.