ডেমোক্রেটদের হাতে জিম্মি ট্রাম্প সরকার

ক্ষমতার ঠিক এক বছরের মাথায় চরম বেকায়দায় পড়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রশ্নে ডেমোক্রেটদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে তার প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ডেমোক্রেটদের রাজি করাতে পারলে সমস্যা থেকে উতরে যাবেন ট্রাম্প। আর ডেমোক্রেটদের মন না পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরাও তার শেষরক্ষা করতে পারবেন না। স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে বিল পাস না হলে স্থবির হয়ে পড়বে সরকারি কার্যক্রম। এতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজ আংশিক বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ সংকট নিরসনে ২০১৮ সালের অগ্রিম বাজেট বা স্বল্পস্থায়ী ব্যয় বরাদ্দের ব্যাপারে আলোচনায় ব্যস্ত রিপাবলিকানরা। আর ডেমোক্রেটরা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ড্রিমার্স প্রকল্পকে (ডাকা) টোপ হিসেবে ব্যবহার করছেন। ডেমোক্রেটরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা কর্মসূচি ‘ডাকা’ বহাল থাকলে সরকারের বিলে সমর্থন দেবেন তারা। খবর এএফপি, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের। অর্থ বরাদ্দসংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত হলেও সিনেটে তা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। সেখানে প্রস্তাবটি গৃহীত হতে হলে অন্তত ৬০টি ‘হ্যাঁ’ ভোট প্রয়োজন। কিন্তু রিপাবলিকানদের হাতে রয়েছে মাত্র ৫১টি ভোট। অর্থাৎ ৯ জন ডেমোক্রেটিক সিনেটরের সমর্থন তাদের চাই। যদি কংগ্রেস এ বিল পাস করতে ব্যর্থ হয় তবে ১৯৯০ সালের পর চতুর্থবারের মতো প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ওবামার আমলে ২০১৩ সালে ওবামা কেয়ার বিলের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটনের শাসনামলেও এমনটি হয়েছিল। ডেমোক্রেটদের সমর্থন না পাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অন্তত এক মাসের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুর করে একটি আইন পাস করতে চাচ্ছেন কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতারা। এটি পাস হলে তা হবে চতুর্থবারের মতো স্বল্পমেয়াদি ব্যয় বরাদ্দ। রিপাবলিকানরা ‘চিপ’ নামে পরিচিত শিশু বীমা কর্মসূচি সচল রাখতে আগামী ছয় বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন। তার ডাকা কর্মসূচিতে অটল ডেমোক্রেটিক সিনেট নেতা চাক শুমার। তিনি বলেন, ‘শুক্রবারের মধ্যে সমঝোতায় না পৌঁছালে, এমনকি স্বল্পমেয়াদি বরাদ্দ পাস না হলে কয়েকদিনের মধ্যে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে প্রেসিডেন্টকে।’ অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদি বরাদ্দ প্রকল্পে বাগড়া দিচ্ছেন রিপাবলিকান অনেক নেতা।
ফলে ঘোর ফাঁদে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক টুইটবার্তায় বলেন, সরকারি কার্যক্রম বন্ধে আমাদের সামরিক বিভাগই বেশি সংকটে পড়বে, ডেমোক্রেট নেতারা এ ব্যাপারে সচেতন নন। সিনেট রিপাবলিকান নেতা মিথচ ম্যাককনেল বলেন, পুরো দেশকে জিম্মি করতে চান শুমার। পাল্টা শুমার বলেন, রিপাবলিকান নেতারা একে-অপরকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু এ খেলা কাজ করছে না। সরকারি কার্যক্রম স্থবিরতা বন্ধে চাক শুমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান পল রায়ান। তিনি বলেন, ‘এটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। খুবই বেপরোয়া। এবং এটি ভুল।’ মার্কিন প্রশাসনের এ সংকট পরিস্থিতি নিরসনে কয়েকজন রিপাবলিকান নেতাও ট্রাম্পের পাশে নেই। আরিজোনার সিনেটর জেফ ফ্লেক বলেন, ডাকা প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হতাশ হয়েছেন তিনি। স্বল্প নয়, দীর্ঘমেয়াদি কোনো বরাদ্দ বিল পাস হলে আমি তাতে সহায়তা দেব। ফ্লেক বলেন, বিতর্ক থাকে এমন কোনো বিলে আমি ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি না। মাইনে রাজ্যের সিনেটর আঙ্গুস কিং বলেন, বারবার স্বল্পমেয়াদি বরাদ্দ বিলে ভোটাভুটির পক্ষে নেই আমি। যুক্তরাষ্ট্রে এবার এ সংকট পরিস্থিতি তৈরি হলে পরিবেশ সংস্থা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক লোন কার্যক্রম, স্বাস্থ্য গবেষণা, জাতীয় উদ্যান, জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য হাসপাতালগুলো খোলা থাকবে। প্রধান সরকারি দফতর যেমন হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস, পররাষ্ট্র বিভাগ ও পেন্টাগনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ছুটিতে যেতে হতে পারে বড় একটি অংশের কর্মকর্তাদের। থমকে যেতে পারে রাশিয়া ও ট্রাম্প সংযোগ নিয়ে রবার্ট মুলারের তদন্ত কার্যক্রমও। দেশটির প্রতিরক্ষা, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, বিচার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ বহু সরকারি দফতরের প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তাকে ছুটিতে যেতে হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.