ঢাকার সাত কলেজ

ঢাকার সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি নিয়ে বহু হাঙ্গামা ঘটে গেল, কিন্তু এর কোনো সুরাহা হলো না। এ নিয়ে আন্দোলনে এক শিক্ষার্থীর চোখ গেল, শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেন এবং শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ ও ভাঙচুর এবং ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটল। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কে নানা পক্ষ সরব হলেও সাতটি কলেজের অসহায় ছাত্রছাত্রীদের দিকটি কারও কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হয় না। অথচ এই সংকটের পেছনে সাত কলেজ বা এর শিক্ষার্থীদের কোনোই দায় নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার যে সাত কলেজ ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজ। এটা এখন স্পষ্ট যে অধিভুক্তকরণের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক কর্মকাণ্ডের বাইরে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা যে প্রতিষ্ঠানটির নেই,
সেটাও টের পাওয়া যাচ্ছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নানা পর্যায়ে অধিভুক্তি বদল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসির পরস্পরকে দোষারোপের যে বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে এর পেছনে তাঁদের ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয়টিও অগ্রাহ্য করা যায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বাস্তবতাবর্জিত সিদ্ধান্ত অথবা দুই ভিসির ব্যক্তিগত রেষারেষির শিকার হয়ে চলেছেন সাত কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্তি বদল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়ার পর বছর না ঘুরতেই এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। তাঁরা পরীক্ষার ফল প্রকাশ চান, তাঁরা পরীক্ষা দিতে চান, তাঁরা ক্লাস করতে চান। তাঁদের এই ন্যায্য দাবির সুরাহা কেউ দিতে পারছে না। ফল প্রকাশ না পাওয়ায় এই শিক্ষার্থীদের অনেকে যেমন নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু করতে পারছেন না, তেমনি সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই অচলাবস্থার একটা জরুরি বিহিত দরকার। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের কোনো জেদাজেদি যেন গুরুত্ব না পায়। আমরা সংকটের দ্রুত সমাধান দেখতে চাই। আমরা চাই পরীক্ষার ফল প্রকাশ বা পরীক্ষার দাবিতে যেন শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে না হয়।

No comments

Powered by Blogger.