ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

ডায়াবেটিস যেহেতু অসংক্রামক ব্যাধি তাই এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে পারিবারিক ইতিহাস, অধিক মাত্রায় খাদ্যগ্রহণ, কায়িক শ্রমের ঘাটতি, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স, রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বেড়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বিষণ্নতা তথা সার্বিক জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে ডায়াবেটিসের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে হৃদরোগ, কিডনি বৈকল্য, পক্ষাঘাত, চক্ষুরোগ, পায়ে পচনশীল ক্ষত, মাড়ির প্রদাহ, মূত্রাশয়ের রোগ প্রভৃতি জটিলতা দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই গুরুত্ববহ। কথায় আছে রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ডায়াবেটিস রোগ-প্রতিরোধ বলতে তিনটি ধাপে বা পর্যায়ে প্রতিরোধ করা বোঝায়। প্রথম ধাপটি হচ্ছে ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা। একে প্রাথমিক প্রতিরোধ বা প্রাইমারি প্রিভেনশন বলে। নিয়ন্ত্রিত এবং সুশৃংখল জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে খুব সহজেই একে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, কম চর্বি ও কম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এজন্য চাই সামাজিক সচেতনতা। প্রতিরোধের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান। ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো রোগের প্রাথমিক ধাপ থেকেই শুরু হয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত।
বয়স ৪৫ বা তার বেশি হলে, ওজন বেশি হলে, রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্নীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে, শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, মহিলাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অধিক ওজনের সন্তান প্রসবের পূর্ব ইতিহাস থাকলে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি। পরিমিত খাদ্য, সুশৃংখল জীবন ও নিয়মিত ওষুধ সেবন এই তিনটি নীতি ডায়াবেটিসের রোগীরা সঠিকভাবে পালন করলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। প্রতিরোধের তৃতীয় ধাপ হচ্ছে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার শনাক্তকরণ ও এর সঠিক চিকিৎসা। ডায়াবেটিস নীরবে রোগীর চোখ, রক্তনালি, হার্ট, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের ভয়ানক ক্ষতি করে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসকে প্রয়োজনীয় ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। জটিল রোগীদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা ও পুনর্বাসন করাও ডায়াবেটিস চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডায়াবেটিসের কারণ, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কার্যকর স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ তথা সুশৃংখল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত, সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিৎসক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনও এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। একে প্রতিরোধ করার জন্য সমাজের প্রতি স্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.