অবিস্মরণীয় এক জাহাজের নাম ওয়াররিমু

যাত্রীবাহী জাহাজ এসএস ওযাররিমু। মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের স্থির নিস্তরঙ্গ জলরাশি কেটে এগিয়ে যাচ্ছিল ভ্যাঙ্কুভার থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। যাত্রীরা কেউ জাহাজের ডেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ বা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবে মগ্ন। নাবিকেরা তাদের নিজের নিজের নির্দিষ্ট কাজে ব্যস্ত- এতগুলো যাত্রীকে নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে। জাহাজের নেভিগেটর ‘নটিক্যাল আলমানাক’-এর চার্টটি টেবিলে রেখে জাহাজের অবস্থানের চার্ট তৈরি করছিলেন। সে সময়ের জাহাজগুলো বর্তমানের আধুনিক জাহাজের মতো কম্পিউটারাইজড অর্থাৎ, কম্পিউটারের সাহায্যে গতিবিধি নির্ধারণ করতে পারত না। নাবিকেরা চাঁদ-সূর্য ও আরও প্রায় ৫৭টি গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের সঙ্গে দিক-বলয়ের কোণ সেকসট্যান্ট নির্ধারণ করতেন। চার্টটি নিয়ে নেভিগেটর জাহাজের ক্যাপ্টেন জন ফিলিপসের কাছে এলেন। ওয়াররিমু তখন প্রশান্ত মহাসাগরে ০ ডিগ্রি, ৩১ মিনিটস উত্তর অক্ষাংশ এবং ১৭৯ ডিগ্রি, ৩০ মিনিটস পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তারিখটা ছিল ৩০ ডিসেম্বর ১৮৯৯।
চার্টটি দেখে ‘মেট’ পেটন বলে উঠলেন, ‘আরে, আমরা তো বিষুবরেখা ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার প্রতিচ্ছেদ বিন্দু থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে রয়েছি।’ ক্যাপ্টেন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জাহাজটির যাত্রাপথ ও গতিসীমার একটু পরিবর্তন করে অপেক্ষা করতে থাকলেন। শান্ত স্থির জল ও পরিষ্কার আকাশ ক্যাপ্টেনকে সাহায্যই করল। মধ্যরাত্রে ওয়াররিমু ঠিক সেই বিন্দুতে পৌঁছে গেল যেখানে বিষুবরেখা ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা একে অপরকে প্রতিচ্ছেদ করছে। এই অবস্থানের ফল হল অদ্ভুত। ওয়াররিমুর সামনের অংশটি তখন দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি এবং পেছেনের অংশটি উত্তর গোলার্ধের শীতকালের মাঝামাঝি পৌঁছে গেল। শুধু তাই নয়, সামনের অংশটির তারিখ ছিল ১ জানুয়ারি ১৯০০ সাল আর পেছনের অংশটির তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ১৮৯৯। তার মানে জাহাজটি শুধু দুটি আলাদা তারিখ, দুটি আলাদা মাস, দুটি আলাদা ঋতু ও দুটি আলাদা সালই নয়, দুটি আলাদা আলাদা শতাব্দীরও সাক্ষী হয়ে একটি অভূতপূর্ব ও অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনা করল।
আমান বাবু
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

No comments

Powered by Blogger.