বাড়ির ছাদে বৃক্ষবিলাস by সাইফুল আলম সুমন

একটা সময় ছিল যখন স্বল্পসংখ্যক বাড়ির মালিক ছাদে বাগান করতেন। এখন এটি বেশ বিস্তার লাভ করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্য শহরগুলোর অনেক বাড়িতেও দেখা যায় ছোট বাগান। বিষয়টিকে খুব ইতিবাচকভাবে দেখছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। তারা মনে করছে, বাড়ির ছাদের এ বাগান শুধু শখের বিষয় নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও রয়েছে এর বড় ভূমিকা। ছাদ বাগানের মাধ্যমে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে, বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া তাজা শাকসবজি, ফলমূলের চাহিদাও মেটে। এসব কারণে বাড়ির ছাদে বাগান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য ছাদের ওপর যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিত। পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হলে এটি প্রাত্যহিক শাকসবজির চাহিদা মিটিয়ে পরিবেশ রক্ষায়ও দারুণ ভূমিকা রাখবে। একটু পরিশ্রম আর পরিকল্পনায় বাড়ির কংক্রিটের ছাদটি পরিণত হতে পারে সবুজ শ্যামল মাঠে। স্থায়ী বাগান করার জন্য ছাদে সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরি করে নেয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে কিনতে পাওয়া টবগুলোও ব্যবহার করা যায়। লোহার হাফ ব্যারেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ব্যারেলের দুই পাশে হাতল থাকলে ভালো হয়। টবের নিচে ছিদ্র রাখতে হবে। এরপর তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবরসার আর একভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করতে হবে।
বর্ষার আগে টবে চারা বা কলম লাগাতে হবে। গাছ নির্বাচন ছাদ-বাগানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য কোন কাঠামোয় লাগানো হবে এবং তার পরিচর্যার ধরন কী হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে। বীজের চারা হিসেবে নয় কলমের চারা লাগালে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া চৌবাচ্চা আর টবে সবজির বীজ বপন করেও চাষ করা যায়। চারপাশে বৃক্ষশোভিত ছাদ-বাগান সমৃদ্ধ একটি বাড়ির পরিবেশ হয় অত্যন্ত মনোরম। তবে ছাদে বাগান করলে তার পরিচর্যা ভূমির বাগানের চেয়ে একটু বেশি করতে হবে। সময়মতো পানি না দিলে গাছ মারা যেতে পারে। এ ছাড়া পরিমিত সার প্রয়োগেরও বিষয় রয়েছে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন, পরিমাণে কমবেশি হলে গাছ টিকবে না। বছরে অন্তত একবার পুরনো মাটি বদলে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে। খুব সাবধানতার সঙ্গে চারা বা বীজ লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণমতো মাটির নিচে রোপণ করতে হবে। চারা বা কলমের ক্ষেত্রে বীজতলা/নার্সারিতে যতটুকু নিচে বা মাটির সমানে ছিল, ততটুকু সমানে ছাদে লাগাতে হবে। একজন কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, কেউ যদি ছাদে বাগান করতে চান, তাহলে তাকে সহায়তা করবে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুধু ছাদ নয়, বাড়ির বারান্দা, বেলকনিসহ যে অংশ খালি পড়ে আছে তাতেই লাগানো যাবে গাছ। এ জন্য দরকার সঠিক নিয়ম অনুসরণ।
সাইফুল আলম সুমন : প্রাবন্ধিক, শ্রীপুর,গাজীপুর

No comments

Powered by Blogger.