ঈশ্বরগঞ্জে মাছ নেই : ব্রহ্মপুত্রনদে অভয়াশ্রমের দাবি

হেমন্তের শেষ আর শীতের শুরুতে এসে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নদী-বিলে দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে ওই নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে বাজার থেকে চরা দামে মাছ কিনে খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে উপার্জন কমে যাওয়ায় কষ্টে দিন কাটছে জেলে পরিবারগুলোর। অভিযোগ উঠেছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নদী-বিলে মাছের ওই আকাল দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা তাদের চাষাবাদের প্রয়োজনে পানি ছেড়ে দেয়ায় হেমন্তের শেষদিকে এসে বিলগুলোতে পানি কমে গেছে। নদীগুলোতে ড্রেজিং না করায় মাঝনদীতে চরপরে সুরু হয়েগেছে নদীর আয়তন। এসব কারণে দীর্ঘদিন পানি ধরে রাখা সম্ভব না হওয়ায় মাছ গুলো বড় হতে পারে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী-বিল পানিতে ভরে গেলেও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। জেলা ও উপজেলা মৎস বিভাগ প্রতিবছর ঘটা করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর নামে মুক্তজলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করলেও তা তেমন কাজে আসছে না। উপজেলার নদী-বিলগুলোতে বর্তমানে পানি কম থাকলেও বর্ষায় ভরাযৌবনে কানায় কানায় উপছে পরে। কিন্তু ওই সময় নেয়া হয়না মাছ উৎপাদনের সঠিক পরিকল্পনা। নদীগুলোতে নেই মাছের অভয়াশ্রম। তাই এ মৌসুমে নদী-বিলে মাছ নেই। এক সময় গ্রামের বিশিরভাগ কম আয়ের মানুষ উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে মাছ ধরে তাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মেটাতো। তাছাড়া এ উপজেলায় প্রায় দুই হাজার জেলে পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। মুক্তজলাশয় গুলোতে মাছ না থাকায় সারাদিন অন্যের পুকুরে জাল বেয়ে যা পান তা দিয়ে একজনের জীবন চলাই কষ্টের। এরপর পরিবার তো আছেই। গত এক বছর আগে সরকারি ভাবে এ উপজেলায় ১৭শ ১৩জন কে মৎসজীবী পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তার কোন সুফল এখনো তাদের হাতে আসেনি। সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দ বা আপদ কালীন কোন সহযোগিতা এখনো তারা পায়নি। এসব কারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা মৎস বিভাগের দাবি এ উপজেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯হাজার মেট্রিকটন।
উৎপাদন হয় ১৯হাজার ২০ মেট্রিকটন। চাহিদার তুলনায় প্রতিবছর ১০হাজার ২ মেট্রিকটন মাছ উপজেলার বাহিরে বিক্রয় করার কথা। কিন্তু উপজেলার মাছের আরতগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রতিনিয়ত বাহির থেকে মাছ আমদানী করছে। আরতদাররা জানান, কিছুকিছু মাছ তারা রপ্তানী করলেও আমদানীটা রপ্তানীর বেশি হয়। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন জলাশয়ে ১৫শ ৮ কেজি বা ১.৫৮ মেট্রিকটন পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। ওই পোনা গুলো তিনটি বিল ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবমুক্ত করা হয়। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা মৎস বিভাগের উদ্যোগে সরকারি ভাবে মুক্তজলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়া হয়। কিন্তু সে মাছ যায় কোথায়, তা কেউ তারা জানেন না। সরকারের লাখ লাখ টাকার পোনা ছাড়ার নামে রিতিমতো ফটোসেশন হয়। প্রতিবছর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘটা করে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা হয় মৎস সপ্তাহ। কি পরিমাণ পোনা অবমুক্ত করা হয় এর একটি হিসেব তুলে ধরা হলেও এতে সংশয় প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তারা বলেন, জলাশয়গুলোতে পানি কমে এলে প্রচুর পরিমান মাছ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো জলাশয়গুলোতে মাছ নেই। তারা প্রশ্ন তুলেন আসলে হিসেব অনুযায়ী পোনা অবমুক্ত করা হয় নাকি শুধু খাতা-কলমে দেখানো হয়। সরকারের উদ্দেশ্য উপজেলার বাসিন্দাদের আমিষের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে ২হাজার জেলে পরিবারের কাজের সৃষ্টি করা। কিন্তু দায়িত্ব প্রাপ্তদের পরিকল্পনার অভাব ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। উপজেলা মৎস বিভাগের হিসেব মতে এ উপজেলায় ১৩২১৬ পুকুর, ১৫টি খাল, ২০টি সরকারি বেসরকারি বিল ও ব্রহ্মপুত্র ও কাঁচামাটিয়াসহ ২টি নদী রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রনদীতে মাছের অভয়াশ্রম সহ টেকসই ও কার্যকরি পরিকল্পনা গ্রহন করা হউক। ব্যহাত হয়ে যাওয়া বিলগুলো পুনরোদ্ধারসহ নদীগুলোতে ড্রেজিং করা হউক। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সানোয়ার রাসেল জানান, উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন কারণে মাছের আকাল আছে । তবে চাষি পর্যায়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় মাছের ঘাটতি নেই। এ উপজেলায় পাপদা, গুলশা, শিং ও কৈ চাষ বেশি হওয়ায় এগুলোর চালান বাহিরে যায়। অন্য দিকে রুই জাতীয় মাছের চাষ কম হওয়ায় রুই জাতীয় মাছের চালান আসে। ব্রহ্মপুত্রনদীতে ৫টি অভয়াশ্রম করতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.