মামলার বাদীই খুনি : প্রেমিকসহ স্ত্রী গ্রেফতার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পরকিয়ার বাঁধা দেয়ায় নিহতের স্ত্রীই তার স্বামীকে খুন করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার বাদী নিহতের স্ত্রীকে তার প্রেমিক সাহাব উদ্দীনসহ আটক করেছে পুলিশ। কথিত প্রেমিকে নিয়ে স্ত্রী বিবি আয়েশা তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। জানা গেছে, মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের জোরারগঞ্জ থানাধীন করেরহাট-রামগড় সড়কের নয়টিলা মাজারের ৫ শত গজ পূর্ব পাশে সরকারী আগর বাগান এলাকায় পাহাড়ে লাশ আংশিক পচন ও পোকা ধরা ভ্যান চালক জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জানুর লাশ গত ২৬ নভেম্বর উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। জানু ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ছাগলনাইয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল আলমের পুত্র। সে ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক ছিল। তার স্ত্রী বিবি আয়েশা বেগম স্বামীর অগোচরে পাশ্ববর্তী উত্তর মনদিয়া গ্রামের মৃত শফি উল্ল্যাহর পুত্র সাহাব উদ্দীনের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। গত ২৩ নভেম্বর জানু রামগড় তার এক আত্নীয়ের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য ছাগলনাইয়া বাজারে আসে। এসময় জানুর সাথে দেখা হয় সাহাব উদ্দীনের, তখন সাহাব উদ্দীন জানুর সাথে তারও এক আত্নীয়ের বাড়ি যাবে বলে জানায়। তখন দুইজন একসাথে করেরহাট এলাকার নয়টিলা মাজার পর্যন্ত আসে। এসময় সাহাব উদ্দীন জানুকে জানায় যে তার এক আত্নীয়ের বাড়ি রয়েছে পাহাড়ের উপর। তারপর মাজারের পাশের আগর বাগানে জানুকে নিয়ে যায় সাহাব উদ্দিন। এসময় জানুর সাথে থাকা দা বহন করতে অসুবিধা হচ্ছে অযুহাতে সাহাব উদ্দিন ইতিমধ্যে দা নিয়ে নেয় এবং পাহাড়ে উঠারপর সেই দা দিয়েই সাহাব উদ্দিন জানুকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর জানুর স্ত্রী আয়েশাকে মুঠোফোনে সাহাব উদ্দিন জানুকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবির জানান, প্রতিদিন দুপুর ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত হয়তো স্বশরীরে দেখা করা নয়তোবা মুঠোফোনে কথা বলে পরকীয়া প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েন স্ত্রী। তবে পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বামী। পরকীয়া যত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল তত স্বামীকে দূরে বহুদূরে ঠেলে দিতে একপায়ে খাঁড়া হন স্ত্রী। পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী তাই স্বামীকে হত্যা করার জন্য প্রেমিককে অনুমতিও দেয়, যাতে নিশ্চিন্তে তারা ভবিষ্যতে যেন বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, স্বামীকে হত্যার সাথে তার এবং সাহাব উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা যেন পুলিশ কোনভাবে সন্দেহ না করে সেজন্য সে সাহাব উদ্দিনের পরামর্শে অজ্ঞাতদেরকে আসামী করে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় দীর্ঘদিন পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জানুর স্ত্রী আয়েশাকে এবং কথিত প্রেমিক সাহাব উদ্দিনকে ছাগলনাইয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। ৯ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালতে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে ৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে তারা। জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, গত ২৬ নভেম্বর জোরারগঞ্জ থানাধীন নয়টিলা মাজারের উপরের একটি সড়ক থেকে ভ্যান চালক জয়নাল আবেদীন জানুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহতের স্ত্রী বিবি আয়েশা অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি অবলম্বন করে বিবি আয়েশার কথিত প্রেমিক সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে সাহাব উদ্দিনের জবানবন্দী অনুসারে জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী বিবি আয়েশাকে গ্রেফতার করে। শনিবার তাদের চট্টগ্রাম আদালতের প্রেরণ করা হলে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।

No comments

Powered by Blogger.