ব্রেক্সিট: যেসব ইস্যুতে সমঝোতা হলো

টানা বৈঠক শেষে ব্রেক্সিট ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লাউডি জাঙ্কার বেক্সিট সমঝোথার পর বেশ কিছু চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন। একে প্রথম পর্যায়ের বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও বৃটেনের সমঝোতাকারীদের তরফ থেকে একটি যৌথ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ডিভোর্স বিল, নাগরিকদের অধিকার ও ইউরোপীয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের বিষয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এসব করতে গিয়ে বৃটিশ সরকার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দিচ্ছে না বলে এক জরিপে মত পাওয়া গেছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়, ব্রেক্সিট আলোচনায় আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে ‘হার্ড বর্ডার’ বা সীমান্ত কড়াকড়ি অবস্থা থেকে সরে এসেছে বৃটেন। তবে সার্বিক বাণিজ্য চুক্তির অনুপস্থিতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকবে বৃটেন। এর সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতি যুক্ক। বলা হয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের বাকি অংশের মধ্যে কোনো নতুন নিয়মকানুনের বাধা থাকবে না। ফলে উত্তর আয়ারল্যান্ড বিনা বাধায় বৃটেনের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সঙ্গে অব্যাহত ব্যবসা করতে পারবে। তবে এসব কাজ কিভাবে হবে সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে,  যে ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে তাতে বৃটেনের বিচ্ছেদ বিষয়ক বিলের অঙ্ক কত তা পরিষ্কার নয়। তবে এর আগে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, এই বিল বৃটিশ করদাতাদের জন্য সুস্ঠু হবে এমন আর্থিক বোঝাপড়া চালানো হবে। ফলে এমন বিলের অঙ্ক দাঁড়াতে পারে ৩৫০০ কোটি থেকে ৩৯০০ কোটি পাউন্ড। সমঝোতা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বাজেটে বৃটেন অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অবশ্য যদি তখন পর্যন্ত তারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে থাকে। এই অর্থ পরিশোধ করা হবে ইউরোতে। পরবর্তী ধাপে এ বিষয়ে আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেলে বৃটেনে অবস্থানরত ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রায় ৩০ লাখ নাগরিকের অধিকার কি হবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে এসব নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তেরেসা মে। বলা হয়েছে, আগের মতোই তারা সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বৃটেন বেরিয়ে যাওয়ার আট বছর পরে পর্যন্ত বৃটেনে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নাগরিকদের অধিকার তদারক করতে পারবে ইউরোপীয়ান কোর্ট অব জাস্টিস। ওদিকে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের পক্ষে জরিপ পরিচালনা করেছে বিএমজি রিসার্চ। এতে দেখা গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ বৃটিশ  মনে করেন, ব্রেক্সিট নিয়ে অতিমাত্রায় মনোযোগী হওয়ার কারণে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইস্যুতে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্য এবং গৃহায়ন খাতের অস্থিরতা দূর করতে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ব্রেক্সিটের পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক জনবল দরকার হবে। এজন্যে বেশ বড়সড় নিয়োগ প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। তবে গত সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ের প্রভাব প্রকৃতপক্ষে কেমন হতে পারে এ স¤পর্কে কোন পূর্ণ মূল্যায়ন এখনো করা হয় নি। গত সপ্তাহে ব্রেক্সিট আলোচনায় জেরবার অবস্থার মধ্যে পরিচালিত ওই জরীপে দেখা গেছে কনজারভেটিভ দলের চেয়ে জনপ্রিয়তায় ৩ শতাংশ এগিয়ে আছে লেবার পার্টি। বিরোধীদলের নেতা জেরেমি করবিনের চেয়ে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। গত সপ্তাহ জুড়ে বৃটেনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো ব্রেক্সিট আলোচনা। এতে প্রচ- চাপে ছিলেন মে।

No comments

Powered by Blogger.