কান্না থামছে না বিশ্বজিতের পরিবারে

বিচারিক আদালতের রায়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও উচ্চ আদালতের রায়ের পর বিশ্বজিতের পরিবারের কান্না যেন থামছেই না। হাইকোর্টের রায়ে আটজন ফাঁসির আসামির মধ্যে দু’জনের দণ্ড বহাল রেখে চারজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং দু’জনকে খালাস দেয়ার পর থেকে ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে থেমে থেমে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার মা-বাবা। রাত নেই দিন নেই মা কল্পনা রানী দাস বিশ্বজিতের ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে বিলাপ করে চলছেন। বাবা অনন্ত দাস ছেলের স্মৃতিচারণ করে কখনও ভাস্কর্যের সামনে আবার কখনও পুজোর ঘরের সামনে গিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাস ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বলে চলেছেন, প্রতি বছর পূজায় বাড়ি আসত ছেলে, গত পাঁচ বছর ধরে আর আসে না। ছেলেকে প্রকাশ্যে এতগুলো সন্ত্রাসী নৃশংসভাবে কুপিয়ে মারল অথচ আদালত দু’জনের ফাঁসির রায় দিল। এটা কী করে হয়? আমি মনরে বুঝ দিব কীভাবে। দেশের সব মিডিয়া হত্যার দৃশ্য প্রচার করেছে। সবাই তা দেখেছে। আমরা বুকভরা আশা নিয়ে খুনিদের ফাঁসির রায় দেখার জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করছি। এটা কী হল?
রোববার উচ্চ আদালত রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদারের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন এবং দু’জনকে খালাস দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৩ আসামির মধ্যে ১১ জনের ব্যাপারে আদালত কোনো মন্তব্য করেনি। আপিল করা দুই আসামিকে উচ্চ আদালত খালাস দিয়েছেন। বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত দাস ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে বিশ্বজিত ঢাকায় যায়। যাওয়ার সময় বিশ্বজিতকে ডেকে বলছিলাম বাবা আমার শরীরটা ভালো নেই। আগামীতে এসে আমাকে দেখবি কিনা জানি না। তুই ভালোভাবে চলাফেরা করিস। এর ১ সপ্তাহ পরই বিশ্বজিত আমাদের রেখে না ফেরার দেশে চলে গেল। অথচ আমি আজও বেঁচে আছি। কথাগুলো বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তিনি বলেন, বিশ্বজিত বাড়ি এলেই তার বন্ধু-বান্ধবরা এসে ভিড় জমাত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের চকলেট কিনে দিয়ে ওদের সঙ্গে আনন্দ করত। বিশ্বজিত ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করত। সে বাড়ি এসে একটুও স্থির থাকত না। সবসময় খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকত। তিনি সরকারের কাছে বিশ্বজিতের খুনিদের বিরুদ্ধে নিন্ম আদালতের রায় বহাল রেখে খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.