যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘হাজার গুণ’ প্রতিশোধ নেব

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘হাজার গুণ’ প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সোমবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিএনএতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেয়া হয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্রকে এমন হুমকি দিল উত্তর কোরিয়া। খবর এএফপি ও দ্য গার্ডিয়ানের। শনিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। একে ‘সাম্প্রতিককালে যেকোনো দেশের ওপর সবচেয়ে কঠোর অবরোধ’ বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি। এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা, লোহা, লৌহ আকরিক, সিসা, আকরিক সিসা ও সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি করতে পারবে না। দেশটি থেকে নতুন কর্মী নেয়া যাবে না। উত্তর কোরিয়ার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করা যাবে না, চলমান যৌথ প্রকল্পেও নতুন করে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দেশটির আরও অনেক ব্যক্তির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে। কেসিএনতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জঘন্য পরিকল্পনা। আমরা আমাদের আত্মরক্ষামূলক পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসব না এবং আমাদের দেশকে পরমাণু শক্তিধর করা থেকে এক পাও পেছাব না। নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব উত্থাপনকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়ে এতে বলা হয়েছে, ‘দেশটিকে তাদের এ অপরাধের জন্য হাজার গুণ বেশি মূল্য দিতে হবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সুরক্ষিত মনে করতে পারে, কারণ দেশটি আমাদের থেকে বহু দূরে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলান অন্যান্য দেশকে এর জন্য ভুগতে হবে। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় ফেরার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশটির ওপর নতুন এ নিষেধাজ্ঞা এটাই প্রমাণ করে যে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু মুক্ত করতে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ।’ সোমবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় আঞ্চলিক ফোরাম আসিয়ান সম্মেলন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় টিলারসন বলেন, পিয়ংইয়ং তাদের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ করলেই কেবল ওয়াশিংটন তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বিবেচনা করবে। এদিন টিলারসন এবং উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়োং-হো পরস্পরকে এড়িয়ে চলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। এ কাজে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন টিলারসন। এমনকি উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকায় একটি ভোজসভায় যোগ দেয়া থেকে বিরত ছিলেন তিনি। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়াকে ভয়াবহ ও ক্রমবর্ধমান প্রত্যক্ষ হুমকি বলে মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। রোববার তারা টেলিফোনে কথা বলার সময় এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। হোয়াইট হাউস জানায়, দুই নেতা টেলিফোনে আলাপকালে উত্তর কোরিয়ার কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পাশাপাশি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জন্য সরাসরি হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তারা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর অবরোধ আরোপকে স্বাগত জানান। ট্রাম্প ও মুন এ সংশ্লিষ্ট সব প্রস্তাব পুরোপুরি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। দুই কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নজিরবিহীন বৈঠক : দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে উত্তর কোরিয়া। রোববার উভয়দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যতিক্রমী এক বৈঠকে অংশ নেন। আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষে রোববার রাতে আয়োজিত এক নৈশভোজে তাদের মধ্যে এ সাক্ষাৎ হয়েছে। এসময় সিউলের পক্ষ থেকে দেয়া আলোচনার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পিয়ংইয়ং। সোমবার সিউলের সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিউং-ওয়াহ উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়োং-হোর সঙ্গে করমর্দন করেন। এ সময় কাং কোরীয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনা নিরসনে সিউলের সামরিক আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ এবং বিভক্ত হয়ে পড়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিলন ঘটাতে নতুন করে আলোচনায় বসার জন্য ইয়োং-হোর প্রতি আহ্বান জানান। তবে তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ইয়োং-হো। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন দক্ষিণ কোরিয়ার দোসররা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে উত্তর কোরিয়াকে চাপ দিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের প্রস্তাবে যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।’ এর পরেও কাং ‘দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই’ বলে উল্লেখ করেন এবং আলোচনার জন্য সামনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.