দুর্নীতি মামলায় এবার নেতানিয়াহুর পালা

দুর্নীতি মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর সরকার প্রধানকে গদি ছাড়তে হয়েছে। দৃশ্যত এবার সেই পথেই হাঁটছেন ইসরাইলের কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কেলেঙ্কারি আর নেতানিয়াহু যেন সমার্থক। এর আগে দুর্নীতির কারণে বেশ কয়েকবারই ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্নীতির কেলেঙ্কারির কারণে কোনোবারই ক্ষমতা হারাতে হয়নি। কিন্তু এবারের তিনটি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বেশ কয়েক মাস ধরেই দুর্নীতির কয়েকটা অভিযোগে তদন্তাধীন রয়েছেন নেতানিয়াহু। গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলি পুলিশ জানায়, অন্তত দুটি মামলায় ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মতো অপরাধের সঙ্গে নেতানিয়াহুর জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহ করছেন তারা। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতি বলেছে, এটা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, এটা উইচ হান্ট। বিরোধীদের প্রচারণার অংশ হিসেবে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে এটা ব্যর্থ হবে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এতে কিছুই হবে না কারণ এমন কোনো ঘটনাই নেই।’ কিন্তু এবারকার পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে নেতানিয়াহুর জন্য। গত শুক্রবার জেরুজালেম পোস্ট জানায়, খোদ নেতানিয়াহুর সাবেক চিফ অব স্টাফ আরি হ্যারো তার বিরুদ্ধে তদন্তে রাজসাক্ষী হতে রাজি হয়েছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে এই উন্নতিগুলো মূল্যায়ন করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের পর ইসরাইলের দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শেষ পর্যন্ত সম্ভবত আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
অনেকেই বলছেন, এমন রাজনৈতিক ঢামাডোলের মধ্যে তিনি আর কতদিন ক্ষমতায় টিকে থাকেন সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। বিখ্যাত রাজনৈতিক কলামিস্ট সিমা ক্যাডমন রোববার ইয়েদিওথ আহারনথ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘আরি হ্যারো রাজসাক্ষীর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। কারণ এ বিষয়ে তার কিছু বলার আছে। কর্তৃপক্ষ যদি তার ছয় মাসের কমিউনিটি সার্ভিস ও জরিমানার শর্তে তার সাক্ষ্য নিতে সম্মত হয়, তাহলে নেতানিয়াহুর ক্ষমতা শেষ। ইতিমধ্যেই তিনি মৃত মানুষের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছেন।’ হ্যারো কোনো গোপন কথা ফাঁস করবেন, তা কেউই জানে না। কিন্তু ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্তাধীন তিনটি মামলার অন্তত একটিতে তিনি ভয়াবহ কোনো প্রমাণ হাজির করবেন। কেস ১০০০, ২০০০ ও ৩০০০ নামে পরিচিত এই তিনটি মামলার প্রথমটি হচ্ছে, সম্পদশালী বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ সংক্রান্ত। পরেরটি হচ্ছে ইসরাইলের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইয়েদিওথ আহারোনোত পত্রিকার সঙ্গে পক্ষপাতমূলক কভারেজ পেতে যোগসাজশ করা এবং সর্বশেষ অভিযোগটি হচ্ছে, জার্মানির কাছ থেকে তিনটি সাবমেরিন ক্রয়ে দুর্নীতি। এই মামলাগুলো আগেরগুলোর চেয়ে গুরুতর। হারেৎজ পত্রিকা জানায়, সরকারী কৌঁসুলি ও আরি হ্যারো যেই চুক্তিতে পৌঁছেছেন, তাতে আর যাই হোক, একটি পরিণতি অপরিবর্তনীয়। সেটি হচ্ছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন।

No comments

Powered by Blogger.