‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন করবে সরকার

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ক্ষুব্ধ সরকার। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। একই সঙ্গে রায়ের পর্যবেক্ষণে দেয়া অনেক বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ বলে অভিহিতও করেছেন তারা। জনগণের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘এই কোর্ট (আদালত) সামরিক সরকারের শাসনামলকে (পঞ্চম সংশোধনী) অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সেই সামরিক সরকারের তৈরি যা আগেই অবৈধ হয়ে গেছে। তাহলে একই কোর্ট (আদালত) কিভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করেন?’ তিনি রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে দেয়া ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি বরাবর লিখিত আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রায় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এসকে সিনহার নিয়োগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো ভুল ছিল না। আমি মানুষ হিসেবে যাকে যোগ্য মনে করি তাকেই প্রমোট করি। তিনি আরও বলেন, আমি এ রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এদিকে বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত অপপ্রচারের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না জানিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়েও কথা বলেন তিনি।
তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘লবিস্ট’ ছাড়াও এ অপপ্রচারের কাজটি বিএনপি জামায়াত তাদের বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে করছে। তাই বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি ও নেতাকর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে। অনির্ধারিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের কপি উত্থাপন করেন। তিনি রায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু আনা হয়েছে, যা প্রয়োজন ছিল না। যেমন এখানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংশোধনী টেনে আনা হয়েছে। এ রায়ে সংসদকে ‘ইমম্যাচিউরড’ (অপরিপক্ব) বলা হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও এ রায়ে আরও অনেক ‘আপত্তিকর’ বিষয় রয়েছে বলে আইনমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রায়তো ওনারা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আপনাদের হাতে এসেছে। এখন রায়ের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা বলুন। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুন। জনগণ যেন বুঝতে পারে ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারা (আদালতের বিচারক) কী মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, রায়ে কোথাও কোথাও সরকার ও জনগণ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। কাজেই আপনারা যেখানেই সুযোগ পাবেন সেখানেই জনগণকে এসব বিষয় জানাবেন। তিনি বলেন, আগে রায় সম্পর্কে জেনেছিলাম। এখন রায়ের কপি হাতে পেয়ে পড়ে দেখলাম, বুঝলাম। জনগণকে এসব বিষয় জানাবেন, কারণ আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের এসব বিষয় জানার অধিকার আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বৈঠক শেষে মুজিবুল হক তার দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আগেই বাতিল করা হয়েছিল। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন হলে সুপ্রিমকোর্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেন, সংশ্লিষ্ট আইন বাতিল করা যেতে পারে। কিন্তু সংবিধান বাতিল করতে পারেন না। এ সংসদ ইমম্যাচিউরড ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এ সংসদের সদস্যরাইতো ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছেন। তাহলে তিনিও তো ইমম্যাচিউরড ও তার নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। সেই প্রশ্নবিদ্ধ রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। তাহলে প্রধান বিচারপতি কি ম্যাচিউরড হতে পারেন?

No comments

Powered by Blogger.