শতাব্দীর সেরা বিয়ে

শৈশব থেকেই সম্পর্ক। এরপর সময় গড়িয়েছে অনেক। আন্তোনেলা রোকুজ্জো ও লিওনেল মেসি ছিলেন দু’জন দু’জনার। সুখের সংসারে এসেছে দুটি সন্তানও। আলোচিত এ জুটি এবার বিয়ের মাধ্যমে স্বর্গীয় সম্পর্কটাকে আনুষ্ঠানিক পরিণতি দিলেন। সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারের বিয়ে বলে কথা। কেবল মেসির জন্মস্থান রোজারিওতে নয়, বিয়ের উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়েছে চারদিকে। এতটাই যে, বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন জাদুকরের বিয়েকে গণমাধ্যম ‘শতাব্দীর সেরা বিয়ে’ এমন শিরোনামও দিয়েছে। রোকুজ্জোকে বলা হচ্ছে ফুটবলের ‘ফার্স্ট লেডি’। কোনো নয়নাভিরাম দ্বীপ নয়, নিজেদের জন্মস্থান রোজারিওর সিটি সেন্টারে শুক্রবার মেসি-রোকুজ্জো জুটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ২৬০ জন অতিথি; যাদের মধ্যে ফুটবল তারকা ও সেলিব্রেটি ছিলেন অনেকে। নেইমার, লুইস সুয়ারেজ, সেস ফ্যাব্রিগাস, জেরার্ড পিকে, দানি আলভেস, আগুয়েরো থেকে শুরু করে মেসির কাছের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পিকে আসেন তার স্ত্রী কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরাকে নিয়ে। মেসির বিয়েতে দাওয়াত পাননি সাম্প্রতিক সময়ে তার কোচ থাকা কেউই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গুয়ারডিওলা ও লুইস এনরিকে। এমনকি আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাও। দাওয়াত না পাওয়াদের তালিকায় ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। ফুটবল ও শোবিজ জগতের সব মহাতারকাকে ম্লান করে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার মাঝরাতে ‘আই ডু’ বলার আনুষ্ঠানিকতা শেষে অতিথিদের সামনে হাজির হন বর-কনে। দুধ সাদা গাউনে পেঁজা মেঘের ভেলায় চেপে রোকুজ্জো যখন সামনে এসে দাঁড়ালেন, তখন ইঞ্চি কয়েকের দূরত্বে দাঁড়িয়ে তার মনের মানুষ। গাঢ় নীল আরমানি স্যুট, দুধ সাদা শার্ট, বুকের কাছে গোলাপ কুড়ি। প্রতীকী। বোধহয় বোঝাতে চাওয়া, এত বছরের প্রেমের পড়েও, তা সদ্য ফোটা কুড়ির মতোই টাটকা। কারও অনুরোধে নয়, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকের দাবি নয়, মেসি এগিয়ে গেলেন আরও একটু। রোকুজ্জোর দিকে। আলতো করে রাখলেন কোমরে হাত। তারপর? ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড। আর প্রেমের দিব্যি। ছিলাম, আছি, থাকব। আন্তোনেল্লার চোখ দুটো বন্ধ। স্বপ্ন আর বাস্তব একাকার হওয়ার পর, চোখ খুললেন। হাসলেন। মনের মানুষের চোখে চোখ রেখেই। ক্যামেরার শাটার আর বন্ধ হতে চাইছে না তখন। শতাব্দীর সেরা বিয়ে হয়ে গেল। একজনের বয়স ৩০, অন্যজনের ২৯। সম্পর্ক ২৫ বছরের! যেখানে এই সময় দাবি রাখে চটজলদি সব কিছুর, সেখানে এত এত বছর একে অন্যের হয়ে থাকার কারণ তো অবশ্যই আছে।
শুধুই দুই সন্তানের মা বলে নয়, শুধুই পার্টনার বলে নয়, সম্পর্কের মাঝে ‘বন্ধুত্ব’ বলে শব্দটা আছে বলেই মেসি আর রোকুজ্জোর প্রেম এত আলাদা। রোজারিওর যে হোটেলে বিয়ের আয়োজন ছিল, সেখানের ত্রিসীমানায় কোনো অপরিচিতের ঠাঁই ছিল না। তবু বেরিয়ে আসে ভেতরের খবর। ঠিক কী কী হল মেসির বিয়েতে। জানা গেছে, রোকুজ্জো বিয়ের জন্য যে তিনটি পোশাক বেছে নিয়েছিলেন তা আনা হয়েছে স্পেন থেকে। স্পেশাল চার্টার্ড বিমানে। ডিজাইনার রোজা ক্লারা তিনটি পোশাকই তৈরি করেছেন। মেসি, তার মা ও বোনের পোশাক তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনার ডিজাইনার ক্লদিও কোসানো। আংটি বদলের পর, রেজিস্ট্রি করেন মেসি আর আন্তোনেল্লা। অবাক করা ব্যাপার হল, তাদের রেজিস্ট্রি নম্বরেও রয়েছে ১০ সংখ্যাটি। ‘০০০৭৭৫১০’! রেজিস্ট্রির সময় সাক্ষী হিসেবে সই করেন মেসির ভাই ও আন্তোনেল্লার বোন। বিয়ের পরপরই মেসি চমকে দেন আন্তোনেল্লাকে। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় গান ‘সিন প্রিন্সিপিও নি ফিনাল (যার শুরু নেই, শেষও নেই)’ গেয়ে ওঠেন আর্জেন্টিনার গায়ক আলবেন পিন্টোস। গুঞ্জন আছে, মেসির মা আর আন্তোনেল্লার সম্পর্ক নাকি গত সাত বছর ধরে মোটেই ভালো নয়। দুই পরিবারের মধ্যেও সমস্যা আছে। তবে মেসি ও রোকুজ্জো এ অশান্তির ছায়া তাদের বিয়েতে পড়ুক চাননি। তাই যে হোটেলে বিয়ের আসর বসেছিল, তার ভিন্ন দু’তলায় ছিল দুই পরিবার। তবে নৈশভোজে সবাই এক হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। মেসির বিয়েতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় স্পেশাল বাক্স হাতে তুলে দিয়ে। যে বাক্সে ছিল ওয়াইনের বোতল। মেসির নিজস্ব ব্যান্ডের ওয়াইন। আর ছিল স্থানীয় মিষ্টি ডুলসে দি লিচি এবং আরও কিছু সামগ্রী। অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছিল ৭০ জন হেয়ারড্রেসার। অনেকের সঙ্গেই ছিল ছোট বাচ্চা। তাদের সামলানোর জন্য রাখা হয়েছিল আয়াদেরও। তবে অতিথিদের তো বটেই, গোটা হোটেল এবং ক্যাসিনো চত্বরে যারা ছিলেন কেউই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেননি শুক্রবার। বিয়েতে আগত অতিথিদের মোবাইল আগেই জমা নিয়ে নেয়া হয়। বাকিদের জন্য গোটা হোটেলে লাগানো হয়েছিল জ্যামার। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যেকোনো মুহূর্তে ছবি, খবর ফাঁস হয়ে যায়। মেসি চাননি তেমন কিছু তার বিয়েতে ঘটুক। আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, সাক্ষাৎকারের জন্য কাউকে চাপ দেয়া চলবে না। অতিথিরা কথা বলতে চাইলে তবেই প্রশ্ন করা যাবে। মেসির সতীর্থরা প্রত্যেকেই বান্ধবী, স্ত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন। তবে নেইমার বেচারা এসেছিলেন একা। এই যে রাজকীয় বিয়ে, তাতে মেসির দুই ছেলে কোথায় থাকবে, তা নিয়ে বিয়ের অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল। বাবার বিয়ে দেখবে ছেলে, এ নিয়ে কম রসিকতাও হয়নি। তবে বাস্তবে দেখা গেল অদ্ভুত এক দৃশ্য। মেসির বড় ছেলে থিয়াগো দূর থেকে বসেই দেখেছে বাবা-মায়ের বিয়ে। তবে আংটি বদল, রেজিস্ট্রি শেষ হতেই মেসিকে দেখা যায় থিয়াগোর কাছে এগিয়ে যেতে। সঙ্গে আন্তোনেল্লাও এগিয়ে যান। ছেলে কি একা বোধ করছে? এত ভিড়ে কি ভয় পাচ্ছে? বিয়ের মুহূর্তেও ওই চিন্তাটাই তাড়া করেছে দু’জনকে। আসলে শুধু বরকনে তো নন। অভিভাবকও। বিয়ের আসরে মেসি-রোকুজ্জো জুটি এ ব্যাপারেও পেলেন ফুল মার্কস। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.