খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ফের ঋণ?

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে একের পর এক ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এবার অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বের করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। দুটি গ্রুপ ও একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের এ ঋণ বের করার চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে একটা গ্রুপ ঋণখেলাপি। আরেকটা গ্রুপ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য ঋণ নিতে এসেছে। তৃতীয় প্রতিষ্ঠানটি বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে কারখানা চালুর তিন মাসের মাথায় আবার ঋণ নিতে আসে। যার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে পরিচালনা পর্ষদের তীব্র বিরোধিতার কারণে তা শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। এদিকে এ ঘটনায় পরিচালকদের কেউ কেউ নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে এসব বিতর্কিত ঋণ অনুমোদন থেকে পিছু হটে। নোট অব ডিসেন্ট হল, কোনো সিদ্ধান্তে লিখিতভাবে দ্বিমত পোষণ করা। অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি পাস হলেও আমি এর সঙ্গে একমত নই। ঋণগুলো দেয়ার জন্য বোর্ডের কাছে প্রস্তাব করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামস-উল ইসলাম।
গত ২৯ জুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এসব ঘটনা ঘটে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের একটি গ্রুপ ১৩০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি অগ্রণী ব্যাংকে। এরপরও গ্রুপটিকে নতুন করে আরও ৯০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দিতে প্রস্তাব আকারে সুপারিশ করেন ব্যাংকের এমডি শামস- উল ইসলাম। তার প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ভালো। তাই তাকে আরও ঋণ দেয়া যেতে পারে। যদিও তিনি আগের ১৩০ কোটি টাকা (ডিক্লাসিফাইড) নিয়মিত করার পরামর্শ দেন। এ সময় পরিচালনা পর্ষদ জানতে চায়, যে গ্রুপ আগেই ১৩০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তা কি করে ভালো হয়। আগের খেলাপি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নতুন ঋণ অনুমোদন দিতে বাধা দেন কয়েকজন পরিচালক। এমনকি কেউ কেউ নোট অব ডিসেন্ট দেয়ারও হুমকি দেন। এরপর ঋণটির অনুমোদন সাময়িক স্থগিত করা হয়। একই সভায় চট্টগ্রামের অপর একটি গ্রুপের অনুকূলে ২০ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়। গ্রুপটি ইতিমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। ঋণটির প্রয়োজনীয়তায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ২০ কোটি টাকা ব্যবহার করা হবে। তখন একাধিক পরিচালক প্রতিবাদ করে বলেন, ব্যাংকের জন্ম হয়েছে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করার জন্য। কারও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংকের জন্ম হয়নি। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রস্তাবনাটি অযৌক্তিক মনে হওয়ায় ঋণটি আটকে দেয়া হয়। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারের সভায় একটি পোশাক কারখানার অনুকূলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব করা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ব্যাংক থেকে মাত্র তিন মাস আগে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কারখানা শুরু করে। আগের ঋণের কিস্তিও দেয়া শুরু হয়নি।
এর মধ্যে আবার টাকা চাওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পর্ষদ এ ঋণটিও আটকে দেয়। তবে এসব ঋণ প্রস্তাবনায় জোরালো সুপারিশ ছিল এমডির। কিন্তু কোনো ঋণই যৌক্তিক মনে না হওয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে পরিচালকদের নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার হুমকির কারণে শেষ পর্যন্ত ১১১ কোটি টাকা বের করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এ ধরনের ঘটনা অগ্রণী ব্যাংকে অহরহ ঘটছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি ব্যাংকের সাবেক একজন পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক বাঁচাতে হলে ব্যাংকারদের সৎ হতে হবে। পরিচালকরা একা পারবেন না। কারণ বোর্ড মিটিংয়ের একদিন আগে প্রস্তাবনা আসে। এত স্বল্প সময়ে ঋণ যাচাই করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকারদেরই ঋণ যাচাই-বাছাই করতে হবে। এদিকে এসব ঘটনার প্রতিবাদে কয়েকজন পরিচালক ৫-৬টি পরিচালনা পর্ষদ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বোর্ডে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। ঋণ অনুমোদনের চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, কিছু ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আর কিছু হয়নি। মূলত জুন ক্লোজিংয়ের কারণে দ্রুত বোর্ড মিটিং শেষ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.