‘ধৈর্যের সীমা’ ছাড়াবেন না

হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে ‘অগ্রহণযোগ্য’ চ্যালেঞ্জের বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনবিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন বিষয়ে ‘রেড লাইন’ (ধৈর্যের সীমা) অতিক্রম করা সমীচীন হবে না।’ যুক্তরাজ্যের কর্তৃত্ব থেকে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের ২০ বছর পূর্তিতে ‘বিশেষ অঞ্চলটির’ প্রথম নারী প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর পর এ হুশিয়ারি দেন জিনপিং। শনিবার লামের পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও শপথ পড়ান তিনি। খবর বিবিসি ও এএফপির। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এদিন পতাকা উত্তোলনসহ ধারাবাহিক কয়েকটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন জিনপিং। নিরাপত্তার মধ্যেও চীনবিরোধী বিক্ষোভ এড়ানো যায়নি। অনুষ্ঠানস্থলের কাছেই বেইজিংপন্থী ও গণতন্ত্রপন্থীদের (চীনবিরোধী) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এখান থেকে অন্তত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিরাপত্তার কারণে শহরের বেশকিছু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিন চীনবিরোধী বিক্ষোভের মুখেই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গ্যারিসন পরিদর্শন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। ২০১৩ সালে চীনের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর এই প্রথম হংকং সফরে গেছেন জিনপিং। বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে হংকংয়ে আসার পর জিনপিং আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে আছে বার্ষিক ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বুধবারই জিনপিংয়ের এ সফরকে কেন্দ্র করে হংকংয়ে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা চীনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া আইকনিক সোনালি ভাস্কর্য বাউহিনিয়া ফ্লাওয়ারে কালো পতাকা ঝুলিয়ে দেন। এসময় আটক হন আমব্রেলা প্রটেস্ট মুভমেন্টের নেতা জোশুয়া ওং এবং আইনপ্রণেতা নাথান লসহ অন্তত ২৬ জন। পরে তাদের মুক্তি দেয়া হয়। শনিবার ফের আটক হয়েছেন ছাত্রনেতা জোশুয়া। শনিবার এক ভাষণে জিনপিং বলেন, ‘হংকং এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন যে কোনো উদ্যোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো বা অনুপ্রবেশের জন্য হংকংকে ব্যবহার করে মূল ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর তৎপরতা সীমা লঙ্ঘনের মতো অপরাধ এবং তা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি আরও বলেন, হংকংয়ের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ সুরক্ষায় এর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
চীনের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের উন্নয়ন ঘটাতে হংকংয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।’ এর আগে হংকং হস্তান্তরের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে জিনপিংয়ের উপস্থিতিতে চীন ও হংকংয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় গোল্ডেন বাউহাইনিয়া স্কয়ারে উপস্থিত লোকজন চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করে। সেখানে গণতন্ত্রীপন্থীদের সঙ্গে বেইজিংপন্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ দুই দলকে পৃথক করে দেয়। গণতন্ত্রপন্থী দল দেমোসিস্টো জানায়, পুলিশ তাদের ৫ সদস্যকে আটক করেছে। অন্যদিকে লিগ অব সোশ্যাল ডেমোক্রেটের আটক হয়েছে ৪ জন। ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংকে ফিরিয়ে দেয় ব্রিটেন। সে সময় থেকে ‘এক দেশ, দুই নীতি’ অনুযায়ী হংকং শাসন করতে সম্মত হয় বেইজিং। শহরটির নিজস্ব আইনি ব্যবস্থা, সীমিত গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের মতো কিছু অধিকারের অনুমোদন দেয় বেইজিং। তবে হংকংয়ের প্রশাসক নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা নেই। চীনের অধীনে এক হাজার ২০০ জনের একটি কমিটি তাকে নির্বাচিত করেন। গত নির্বাচনে মুখ্য প্রশাসক নির্বাচিত হন লাম। তিনি বেইজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত।

No comments

Powered by Blogger.