বন্দরে কনটেইনার জট

জাহাজের ধাক্কায় দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন অচল হয়ে পড়ায় একদিকে কনটেইনার ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটেছে। অন্যদিকে টানা ঈদের ছুটির কারণেও কনেটইনার ডেলিভারি হয়েছে কম। এ দুটি কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের জট লেগেছে। শনিবার পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৪০ হাজার টিইইউএস (টুয়েন্টি ফিট ইক্যুভেলেন্ট ইউনিটস) পণ্যভর্তি কনটেইনার ছিল, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে ৪ হাজার টিইইউএস বেশি। কেবল চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে নয়; বেসরকারি অনেক ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতেও (আইসিডি) ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার জমে গেছে। এ নিয়ে দিশেহারা চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট ডিপো কর্তৃপক্ষ। এতে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে কনটেইনার জটের পাশাপাশি সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরেও সৃষ্টি হয়েছে জাহাজজট। শনিবার বহির্নোঙরে ৯১টি জাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল। এর মধ্যে বহির্নোঙরে কনটেইনার জাহাজ ছিল ১৯টি। বার্থিংয়ে কনটেইনার জাহাজ ছিল ১০টি। বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব যুগান্তরকে বলেন, প্রতি ঈদের আগে-পরেই এ রকম কনটেইনার জট লাগে কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো পরিকল্পনা নেয় না, এর ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সরওয়ার শনিবার সন্ধ্যায় ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি কনটেইনার থাকার কথা স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, ‘ঈদের ছুটি ও ব্যাংক বন্ধ থাকায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও বন্ধ থাকে। ওই সময় আমদানি পণ্য ডেলিভারি হয় না, তাই কনটেইনার একটু বাড়তি থাকে। পণ্য ডেলিভারি নেয়া শুরু হয়েছে, তাই কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ এতে কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে বন্দর সূত্র জানায়, ঈদের আগের দিন বিকালে জেটিতে নোঙর করার সময় ১৮৪ মিটার লম্বা মিসরের পতাকাবাহী কনটেইনার ভ্যাসেল ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক জেটি চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে জেটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় জেটির ওপর রেল ট্র্যাকে স্থাপিত দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেটির তিন নম্বর গ্যান্ট্রি ক্রেন রেল ট্র্যাক থেকে কিছুটা সরে যায়। চার নম্বর গ্যান্ট্রি ক্রেনের কিছু যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার পর জেটি অচল হয়ে পড়ে। এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট সি কনসোর্টিয়াম। ঘটনার পর বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জাহাজটিকে আটক করা হয়েছে। এই দুটি ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস করে ইয়ার্ডে রাখা হয়। একইভাবে পণ্য বোঝাই কনটেইনারও ইয়ার্ড থেকে জাহাজে তোলা হয়। অচল হওয়ার কারণে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস ও বোঝাই বিঘিœত হচ্ছে। বাকি দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে চলছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে বন্দরের সদস্য (এডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম যুগান্তরকে বলেন, জাহাজের ধাক্কায় গ্যান্ট্রি ক্রেন অচল হওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন ও খুবই স্পর্শকাতর। তদন্ত শেষ হলে ক্ষয়ক্ষতি জানা যাবে। আমরা জাপানের মিৎসুবিশিকে চিঠি দিয়েছি। তাদের টিম এসে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে বললে আমরা জাহাজের মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করব। তিনি আরও বলেন, ‘দুটি ক্রেন অচল হয়ে যাওয়ায় আমাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা গিয়ারলেস (যেসব জাহাজের ক্রেন নেই) ভ্যাসেলকে চট্টগ্রাম বন্দরে না পাঠানোর জন্য শিপিং এজেন্টদের অনুরোধ করেছি। আপাতত জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার উঠানো-নামানো করা হচ্ছে।’ জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃৃপক্ষ জেটি ব্যবস্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেটিতে পানগাঁও টার্মিনালের জাহাজ বার্থিং দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) গিয়ারলেস (যেসব জাহাজে ক্রেন নেই) কনটেইনার মাদার ভ্যাসেল ভেড়ানো হচ্ছে। যেহেতু এনসিটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কমপক্ষে বারোটি গ্যান্ট্রি ক্রেনের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র চারটি। বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। অথচ শনিবার কনটেইনারের পরিমাণ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি আইসিডিগুলোতে কনটেইনারের সর্বমোট ধারণ ক্ষমতা ৫২ হাজার টিইইউএসের কাছাকাছি। শনিবার ডিপোগুলোতে কনটেইনারের পরিমাণ ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারই রয়েছে ১১ হাজার ৫৮০ টিইইউএস।

No comments

Powered by Blogger.