তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত : পানিসম্পদ মন্ত্রী

পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের দিকনির্দেশনার প্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী নদীর অন্তবর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া মনু, মুহুরী খোয়াই গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন বিষেয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। অচিরেই সমতা, ন্যায়ানুগতা এবং পারস্পরিক ক্ষতি না করার নীতির ভিত্তিতে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন করা হবে। ভারতের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান। পানিসম্পদ মন্ত্রী জানান, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে শুকনো মৌসুমে ফারাক্কার গঙ্গা নদীর প্রবাহ বন্টনের লক্ষ্যে ৩০ বছর মেয়াদী একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৯৭ সাল হতে প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সবোর্চ্চ গুরুত্ব প্রদান করে বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। বিশেষভাবে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি স্বল্পতার কারণে দু’দেশের জনদুর্ভোগের কথা অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রয়োজন মর্মে যৌথ ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী জানান, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধে সরকার এফআরইআরএমআইপি শীর্ষক একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থীক সহায়তায় প্রকল্পটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে মোট ৩টি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। প্রতিটি পর্যায়ে এর কাজ ৩টি পৃথক ডিপিপির আওতায় বাস্তবায়িত হবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটি থেকে আরিচা পর্যন্ত যমুনা নদীর উভয় তীর, গঙ্গা নদীর প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজের ভাটি থেকে আরিচা পর্যন্ত উভয় তীর এবং পদ্মা নদীর আরিচা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত নদীর উভয় তীর পর্যন্ত বিস্তৃত।
গত ২০১৪ সালের ১৭ জুনে মোট ৮২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। টেন্স-১ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭ কিলোমিটার ৮০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, ২৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ, ৪টি রেগুলেটর নির্মাণ, ভূমি পুনরুদ্ধার পাইলটিং কাজ এবং ৬০টি কমিউনিটি বেইজড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইউনিট স্থাপন করা হবে। মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের এক প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী জানান, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত দেশে মোট ৩৯৭ দশমিক ৭২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং ও খনন করা হয়েছে। আরো ৯৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ চলমান রয়েছে। নদীর ভাঙন রোধ, নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনে জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সমগ্র পোল্ডারগুলোকে জলবায়ু ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ভাঙন ইত্যাদির কবল থেকে রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘কোস্টাল এমবার্কমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-ফেজ ১’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা এবং মেয়াদকাল ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এছাড়া উপকুলীয় পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরে জেলার ৭০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ইমারজেন্সি ২০০৭ সাইক্লোন রিকোভারী অ্যান্ড রেস্টোরেশন’ প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.