মিঠা পানির ১০৮ প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেছেন, ১০৮ প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, ৫৪টি প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে, ১২টি প্রজাতির মাছ মহাসংকটে এবং ১৪টি প্রজাতির মাছ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সরকারি দলের বেগম পিনু খানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংসদকে এসব তথ্য জানান। মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮০০ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি আছে, এর মধ্যে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ রয়েছে। আইইউসিএন’র তথ্য মতে, দেশের স্বাদুপানির ৬৪টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণ এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতির ওপর ধারাবাহিক গবেষণা করে ১৭ মাছের প্রজনন ও চাষ বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছের মধ্যে রয়েছে- বাটা, সরপুটি, ভাঙ্গনা, কালিবাউশ, গণিয়া, মহাশোল, পাবদা, গুলশা, শিং, মাগুর, ভেদা, গুজি, আইড়, চিতল, ফলি, কুচিয়া ও টেংরা। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব প্রজাতির মাছ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে বাজারে দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রাপ্যতা সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এসব মাছের ক্রয়মূল্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে এ কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী ১ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার পোনা অবমুক্তির ফলে ৭ হাজার ৬৫২ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন মাছ অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাত থেকে দেশব্যাপী পোনা অবমুক্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
৩ বছরে দেশে চামড়া উৎপাদন বেড়েছে ১৩.১৬ শতাংশ
সরকারি দলের সদস্য মো: আবুল কালামের এক প্রশ্নের জবাবে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, বিগত ৩ বছরে দেশে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ চামড়া উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চামড়া উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ পিস, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬০২ পিস এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চামড়া উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ২৫ হাজার ৪১ পিস।
প্রতিদিন দুধের ঘাটতি ২ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮০৮ লিটার
সরকারি দলের সদস্য পিনু খানের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ১ কোটি ৯৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০৭ লিটার দুধ এবং ৩ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৩ টি ডিম উৎপাদিত হয়। সারাদেশে প্রতিদিন দুধের চাহিদা ৪ কোটি ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৫ লিটার এবং ডিমের চাহিদা ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৩টি। সারাদেশে প্রতিদিন দুধের ঘাটতির পরিমাণ ২ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮০৮ লিটার এবং ডিমের ঘাটতির পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ২৬০টি।
সরকারি দলের সদস্য দিলারা বেগমের অপর এক প্রশ্নের তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে জনপ্রতি দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা ছিল গড়ে ৪৩ দশমিক ৩৫ মিলিলিটার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ দশমিক ৫৯ মিলিলিটার।
মৎস্য খাতে ৩৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়েছে
সরকারি দলের অ্যাডভোকেট মো: রহমত আলীর এক প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, সারাদেশে ৩৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার ফলে ৫৮ হাজার ৫৩৩ জন সুফলভোগী উপকৃত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় দেশের মৎস্যসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে মৎস্যচাষীদের ঋণ দেয়া হয়। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নির্দেশিকা মোতাবেক বিতরণকৃত অর্থ আদায়পূর্বক বিদ্যমান তহবিলের সাথে যোগ করে রিভলভিং ফান্ড হিসেবে পুনরায় দরিদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যচাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয়, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। মৎস্য খাতে এ ক্ষুদ্রঋণ সম্পূর্ণ সুদমুক্ত। শুধুমাত্র শতকরা ৫ ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য।

No comments

Powered by Blogger.