তানোরে 'অপারেশন রিবার্থ' শেষ

রাজশাহীর তানোর উপজেলার ডাঙাপাড়া গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত ‘অপারেশন রিবার্থ’ শেষ হয়েছে। সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে অভিযান শেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। এর আগে রাত ১০টার দিকে তারা অভিযান শুরু করে।  এর আধাঘণ্টার পরই বিস্ফোরণের একটি বিকট শব্দ পাওয়া যায়। অভিযান শেষে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এসময় তার সঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁঞাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা নিশারুল আরিফ যুগান্তরকে জানান, এ অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন রিবার্থ’। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে বাড়িতে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট পাওয়া গেছে। সেগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তবে এর বাইরে বাড়িতে কোনো বোমা বা অস্ত্র পাওয়া যায়নি। বাড়িতে কোনো জঙ্গিও পাওয়া যায়নি। নিশারুল আরিফ জানান, ওই বাড়িতে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই, কিছু সিডি, নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও দুটি মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে। এগুলো জব্দ করা হয়েছে। অভিযান শেষে বাড়ির চারপাশের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জারি করা ১৪৪ ধারাও তুলে নেয়া হয়েছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের কাজ শেষে বাড়িটিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা কাজ করেন।
এর আগে রাত ৯টার দিকে ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একটি প্রতিনিধি দল তানোরের ওই জঙ্গি বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়ির ভেতর কেউ না থাকায় তারা রাতেই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত কোনো রক্তপাত ছাড়াই অপারেশন রিবার্থ শেষ হয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনও আতঙ্কিত রয়েছেন প্রত্যন্ত বরেন্দ্রের ওই এলাকার বাসিন্দারা। প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত মধ্যরাতে তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার ডাঙাপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক রমজান আলীর বাড়িটি ঘিরে ফেলে বগুড়া জেলা ডিবি ও রাজশাহী জেলা পুলিশের সদস্যরা। এরপর বাড়িটি থেকে সবাইকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। তখন রমজান আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (২৬) ও ইসরাফিল হোসেন (২৪) এবং জামাতা রবিউল ইসলাম (২৫) বের হয়ে আসে। পরে বাড়িটির ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ। প্রথম দফার ওই অভিযানে বাড়ির ভেতর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। এ সময় বাড়ি থেকে রমজান আলী (৫০), তার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪৫), তাদের মেয়ে হাওয়া খাতুন (২৪), পূত্রবধূ মর্জিনা খাতুন (২৫) ও হারেসা খাতুনকে (২১) আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে এক মাস থেকে নয় বছর পর্যন্ত বয়সের চার শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে শিশুসহ মোট আটকের সংখ্যা ১২ জন। তাদের সবাইকে তানোর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রমজান আলীর পুরো পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদসহ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতো।

No comments

Powered by Blogger.