রাজধানীতে দিনভর বৃষ্টি : জলজট যানজটে দুর্ভোগ

দিনভর বিরামহীন বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত তলিয়ে যায়। রোববার গভীর রাত থেকে সোমবার রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছিল। এতে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনভর জলজট আর যানজটে নাকাল হন নগরবাসী। বিশেষ করে কর্মব্যস্ত মানুষের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উন্নয়ন কাজের কারণে খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোয় শ্লথগতিতে পরিবহন চলাচল করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে অনেককে বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কে ছিল সীমাহীন দুর্ভোগ। সরেজমিন দেখা যায়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, জোয়ার সাহারা, কুড়িল এলাকার সড়কে জলজটের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, বাড্ডা ইউলুপ, নতুনবাজার থেকে জোয়ার সাহারা পর্যন্ত উন্নয়ন কাজের কারণে জলজটে ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া মিরপুর শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, কালশী, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন, শহীদনগর, ধানমণ্ডি মধুবাগ এলাকায় জলজটে নাকাল হতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উন্নয়ন কাজের নামে প্রগতি সরণি সড়ক খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করে রেখেছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। এই সড়কে চলাচল করতে চরম ভোগান্তি মাড়াতে হচ্ছে পথচারীদের। কিন্তু সেদিকে সংশ্লিষ্ট কারও খেয়াল নেই। ঢাকা উত্তরের মেয়রও এ ব্যাপারে নির্বিকার রয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দ্রুত তারা বিদ্যমান দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান। সোমবারের টানা বৃষ্টিতে মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকার অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ওই এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা। তারা জানান, সাংবাদিক কলোনি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খালটি পরিষ্কারের ব্যাপারে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সভা করবেন বলে জানান।
বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা উবায়দুল্লাহ বাদল যুগান্তরকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে মোটরবাইকে শাহজাহানপুর থেকে কুড়িল যেতে জলজট ও যানজটে নাকাল হয়েছি। এর মধ্যে উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে খানাখন্দে ভরা সড়কে দুর্ঘটনায় কবলে পড়তে হয়েছে। গর্তে পানি জমে থাকায় অসতর্কভাবে সেখানে চলে যায় মোটরবাইকের চাকা। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর জলজট নিরসনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসাও কাজ করছে। কোথাও বড় ধরনের জলাবদ্ধতার খবর পাইনি। তবে বিভিন্ন স্থানে যে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা নিষ্কাশন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার দক্ষিণাংশের মধ্যে শুধু পুরান ঢাকার কিছু অংশে জলজট হয়েছে। অন্য এলাকায় তেমন জলজট হয়নি। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সেটুকু নিষ্কাশনে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা উত্তরের কালশীর সাংবাদিক কলোনি এলাকায় জলজট হয়েছে। এর মূল কারণ সাংবাদিক কলোনি খাল আবর্জনায় ভরাট। এ ব্যাপারে দ্রুত ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে সভা করা হবে। এ ছাড়া উন্নয়ন কাজের কারণে যেসব সড়কে ভোগান্তি হয়েছে, সেগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।

No comments

Powered by Blogger.