কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় কাতার কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসরসহ ছয়টি দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এর ফলে অর্থনৈতিক সম্পর্কও ভেঙে পড়বে। আঞ্চলিক সম্পর্কের হঠাৎ এ অবনতির কি প্রভাব পড়বে কাতারের অর্থনীতিতে এবং সেই দেশের অধিবাসীদের ওপরে? মাত্র ২৭ লাখ মানুষের বসবাস আরব উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এ ছোট রাষ্ট্রে। তবে কাতার তার ওজনের চেয়ে অনেক উপরের পর্যায়ে খেলার চেষ্টা করে। মানুষ কাতারকে চেনে আংশিকভাবে জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরার জন্য। আরও পরিচিতি এসেছে ক্রীড়া জগতে কিছু সাফল্যের মাধ্যমে, যেমন ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার অর্জন এবং বিশ্বের সব চেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বার্সেলোনাকে স্পন্সর করে। আর রাজধানী দোহা ব্যাপক আধুনিক উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক বহুজাতিক কোম্পানিকে সেখানে অফিস খুলতে আকৃষ্ট করেছে। কাজেই, এ সংকট অনেক কিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে। আবুধাবির ইতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং দুবাইভিত্তিক এমিরেটস মঙ্গলবার থেকে তাদের দোহাগামী বা দোহা থেকে সব ফ্লাইট স্থগিত করবে। বর্তমানে এ দুই বিমান সংস্থা দোহাতে দিনে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। স্বল্প ব্যয়ের বিমান সংস্থা ফ্লাই দুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়াও তাদের দোহা ফ্লাইটগুলো বাতিল করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, অন্যান্য বিমান সংস্থা যেমন বাহরাইনের গালফ এয়ার এবং মিসরের ইজিপ্টএয়ারও তাদের দোহা ফ্লাইট বাতিল করবে। এর আগে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর ঘোষণা করে যে তারা কাতারের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ ছিন্ন করবে এবং নিজেদের আকাশপথ কাতার এয়ারওয়েজের জন্য বন্ধ করে দেবে। কাতারের জাতীয় বিমান সংস্থা এখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দুবাই, আবুধাবি, রিয়াদ এবং কায়রোর মতো জায়গায় তাদের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ইতিমধ্যেই সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। কিন্তু এ অঞ্চলের আকাশপথের একটি বড় অংশ তার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বাধ্য হবে তাদের যাত্রাপথ বদলাতে। এর ফলে অনেক রুটে সময় বেশি লাগবে। যেমন ইউরোপ যাত্রায় আগে ৬ ঘণ্টা লাগত, সেটা যদি এখন রুট বদল করার ফলে ৮-৯ ঘণ্টা লাগে তাহলে যাত্রীদের জন্য আর সুবিধাজনক থাকবে না এবং তারা বিকল্প খুঁজতে পারেন। মরুভূমির দেশগুলোর স্বাভাবিক কারণেই খাদ্য ফলাতে কষ্ট হয়। খাদ্য নিরাপত্তা কাতারের জন্য বড় একটি বিষয়। কারণ স্থলপথে দেশে প্রবেশ করার একটিই পথ এবং সেটা হচ্ছে সৌদি সীমান্ত দিয়ে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এ সীমান্ত দিয়ে আসে এবং মালামালের একটি বড় অংশ খাদ্যদ্রব্য। ধারণা করা হয়, কাতারের খাদ্য আমদানির ৪০ শতাংশ এ পথে আসে। সৌদি আরব বলেছে তারা এ সীমান্ত বন্ধ করে দেবে এবং ট্রাক আসা বন্ধ হলে কাতার বিমান এবং সমুদ্রপথে মালামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে যেটা সাধারণ মানুষকে সরাসরি আঘাত করবে। কাতারে এ মুহূর্তে কয়েকটি বড় নির্মাণ প্রকল্প চলছে, যাদের মধ্যে আছে একটি নতুন বন্দর, মেডিকেল এলাকা, মেট্রো প্রকল্প এবং ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য আটটি স্টেডিয়াম। নির্মাণ শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কংক্রিট এবং ইস্পাত জাহাজে এলেও, স্থলপথ দিয়ে সৌদি আরব হয়েও আসে। সীমান্ত বন্ধ হলে খাদ্যদ্রব্যের মতো নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কাজ সময়মতো শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে। সৌদি সরকার বলেছে, সম্পর্ক ছিন্ন করার অংশ হিসেবে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের কাতারে যাওয়া, সেখানে বসবাস করা বা কাতার হয়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের ১৪ দিনের মধ্যে কাতার ছাড়তে বলা হয়েছে। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.