সবাই রেকর্ড গড়তে চান!

আমার বাসায় অনেকদিন থেকে একজন গৃহকর্মী আছেন। তার একটি মেয়ে বড় হচ্ছে। ভবিষ্যতে ওর বিয়ের কথা ভাবতে হবে। তাই আমার স্ত্রী তাকে এখন থেকেই সঞ্চয় করার পরামর্শ দেন। বছর কয়েক আগে তিনি তাকে ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে দিয়েছিলেন। ভদ্রমহিলাও সঞ্চয় করতে উৎসাহী হয়ে পড়েন। তিনি কষ্টে চললেও একটু একটু সঞ্চয় করে এতদিনে এক লাখ টাকার বেশি জমিয়ে ফেলেছেন। এবার বাজেট প্রণয়ন করে অর্থমন্ত্রী খুব খুশি। তার জীবনের নাকি শ্রেষ্ঠ বাজেট এটি। আমি বাজেট আলোচনায় যাব না। অর্থ সংক্রান্ত বিদ্যা আমার কাছে বরাবর জটিল। ছেলেবেলায় যেমন অঙ্ক বিদ্যা এড়িয়ে চলতাম, এখনও সেভাবে অর্থ সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। আমার আয়কর পরামর্শক প্রতিবছর আমার আয়কর রিটার্নের হিসাব বোঝাতে এলে আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই। বলি আমাকে কত পরিশোধ করতে হবে সেটি বলুন। এ কারণে মনে করি আমার বাজেট আলোচনার যোগ্যতা নেই। বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা টিভিতে দেখে আমার স্ত্রী দারুণ কৌতুকভরে বললেন, জানো, অর্থমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন আমাদের ময়নার মা একজন সম্পদশালী। তাই তাকে এখন ৮০০ টাকা আবগারি কর দিতে হবে। তারপর তিনি গম্ভীর হলেন। বললেন, এ কথা জানার পর নিশ্চয় ‘লাখপতি’ ময়নার মা তার অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিতে বলবেন। এই ৮০০ টাকা সঞ্চয় করতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দুশ্চিন্তা আমারও কম হচ্ছে না। সঞ্চয়ী হিসাব তো বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত, নিন্ম-মধ্যবিত্তেরই থাকে।
টাকার নিরাপত্তা আর সামান্য সুদের আয়ের আশায়। সুদের হার ক্রমাগত কমছে আর এখন যুক্ত হচ্ছে আবগারি করের পীড়ন। আমার মতো অনেক চাকরিজীবীর বেতন চলে যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। আগের জমা আর বেতন মিলে দু’-একদিনের জন্য এই শ্রেণী লাখপতি হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে তো আবগারি করের কোপ পড়ে গেছে। আমার এক বন্ধু মজা করে বললেন, রেকর্ড গড়ায় ঝলমলে অর্থমন্ত্রীদের সম্ভবত মানবিক দায় রয়েছে। তারা শতকোটি টাকার ভিআইপি ভিখিরি ঋণখেলাপিদের এবং রাজনৈতিক প্রশাসনিক ব্যাংক লুটেরাদের দায় মেটাতে সম্ভবত আমাদের মতো ‘লাখপতি’দের দ্বারস্থ হয়েছেন। শুনেছি আবগারি করকে নাকি ‘সিন ট্যাক্স’ অর্থাৎ ‘পাপ কর’ বলা হয়। মদ, গাঁজা, সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের ওপর এ কর বসানো হয়, যাতে গ্রহীতারা নিরুৎসাহিত হন। এখন সম্ভবত সঞ্চয়ে আগ্রহীদেরও শাসন করার জন্য ব্যাংক-সঞ্চয়ের ওপর আবগারি কর বসছে। ভাবলাম বাজেটের পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় এখন কুমোরদের ব্যবসা বাড়বে। সাধারণ মানুষ ঐতিহ্যে ফিরে যাবে। পিতলের কলস মহার্ঘ্য। তারা এখন মাটির কলস কিনে টাকা পুরে ঘরের ভিটে খুঁড়ে মাটিতে পুঁতে রাখবে।
২. অর্থমন্ত্রীর মতো সম্ভবত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাথায়ও রেকর্ড গড়ার শখ চেপেছে। দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যা করতে পারেনি, তা করে দেখিয়ে দিল তারা। সম্প্রতি ছাত্র বিক্ষোভের মুখে উপাচার্য মহোদয়ের বাসা কাম অফিস ভাংচুর এবং কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অপরাধের নামে ৩১ জন আর নামবিহীন ৪০ জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র বিক্ষোভ থামাতে পুলিশ ডেকে আনা হয় এবং ভিসি ভবন এলাকায় থাকা বিক্ষোভরত ৪৩ ছাত্রছাত্রীকে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। এর মধ্যে ছাত্রী ছিল ১২ জন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ছাত্র জানাল, প্রিজনভ্যানে বস্তা ভরার মতো করে নাকি ছাত্রছাত্রীদের ভরা হচ্ছিল স্বয়ং ভিসির বাসভবনের গেটে। আমি জানি না এ দৃশ্য দেখে কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছিল কিনা। শিক্ষার্থীরা অন্যায় আচরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন রয়েছে। সে আইনেই তাদের সোপর্দ করার কথা। বিশেষ কমিটি থাকে। কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে বিচার সম্পন্ন করে সুপারিশ পাঠায়। সিন্ডিকেট শাস্তি প্রদান করে বা অব্যাহতি দেয়। সাধারণত আমরা দেখে এসেছি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকতে উপাচার্য মহোদয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কোনো অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থী আটক করলে দ্রুত তাকে ছাড়িয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে উল্টো হল।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এক-দু’জন অভিযুক্ত ছাত্র নয়, গণগ্রেফতার করিয়ে দিল নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের। শেষ রাতে গ্রেফতার করিয়ে সুপারসনিক গতিতে সকালেই কোর্টে চালান করিয়ে দিল। অভিযোগ এমনই ‘গুরুতর’ ছিল যে, গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়াতেই সেদিন বিকালের মধ্যে সবাই জামিন পেয়ে যায়। গ্রেফতারের পর শিক্ষকদের একটি দল উপাচার্যের কাছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা তুলে নেয়ার অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে নানা বর্ণনার পর উপাচার্য মহোদয় ছাত্রদের অসংযত আচরণের কথা বলেছিলেন। আর বলেছিলেন, একজন ছাত্র তার দিকে তেড়ে এসেছিল। পরে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেল এ অসুস্থ ছাত্রটিকে পুলিশ হাসপাতালের বেডে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে। যা দেখে মহামান্য আদালত জবাব দেয়ার জন্য আশুলিয়া থানার ওসিকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ‘বেয়াদবির’ উপযুক্ত শাস্তিই যেন পেল ছাত্রটি। এটিও সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য একটি রেকর্ড। এখনও সম্ভবত ক্ষোভ কমেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। শিক্ষক ছাত্রদের পক্ষ থেকে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানালেও সিন্ডিকেট সভা তা গ্রাহ্য করেনি। কেউ কেউ বলতে পারেন, এখানে প্রশাসনের দায় কী? সিন্ডিকেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বডির সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে, সেই সিন্ডিকেটই মামলা তোলার ব্যাপারে রাজি হয়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের মানুষ ভালো করেই জানেন এক অদ্ভুত গণতন্ত্র চলে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ মেকানিজমের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয় আর সরকারদলীয় অর্থাৎ উপাচার্য পক্ষীয়রাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে জয়লাভ করে সিন্ডিকেট সদস্য হন। এরপর উপাচার্যের সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট অথবা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে উপাচার্য চলেন। ছাত্ররা নিশ্চয় অনেক গর্হিত অন্যায় করেছে।
শিক্ষকদের কারও কারও ওপর চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। উপাচার্য মহোদয়ের বাসার জানালার কাচ ভাংচুর করেছে। এসব অবশ্যই নিন্দনীয়। এসব ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। আবার এ বাস্তবতাও মানতে হবে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে অন্যায় আর সুনির্দিষ্ট বা সেনসেটিভ ইস্যুতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন থেকে উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির অপরাধ এক নয়। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের সংকট নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ঘটলে এ ধরনের অবস্থায় পুলিশ অনেক সময় বেনামে শত শত বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনটি সচরাচর ঘটে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই মিলে একটি পরিবারের মতো মনে করে। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে পরিবারের কোনো কোনো সদস্য অভব্য আচরণ করে ফেলতেই পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে এ সময় শাসন করে বা বুঝিয়ে সমস্যা নিষ্পত্তি করতে অগ্রণী হন উপাচার্য মহোদয় ও তার কাছের শিক্ষকরা। সংকট বড় হলে উপাচার্য মহোদয় দলমত নির্বিশেষে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে বসে ফয়সালা করেন। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার এসবের বালাই ছিল না। এ আন্দোলনের পেছনে একটি মর্মান্তিক আবেগ ছিল। আরিচা রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় দু’শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে। শিক্ষার্থীরা আশা করেছিল তারা সতীর্থদের মরদেহ শেষবারের মতো দেখবে এবং ক্যাম্পাসে জানাজার আয়োজন করবে।
কিন্তু তা করতে দেয়া হয়নি। ক্যাম্পাস থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে মরদেহ থাকলেও তা ক্যাম্পাসে না এনে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সংকট সেখান থেকেই তৈরি। তাহলে মানতে হবে সব ঘটনার অনুঘটক প্রশাসন। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা আরিচা সড়ক অবরোধ করার আগে প্রশাসন ২৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পেয়েছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে তাদের আবেগের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করার। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। সড়ক অবরুদ্ধ হলে উপাচার্যের ভাষ্যেই বলতে হয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের চাপে তারা ছাত্রদের অবরোধ তোলার অনুরোধ জানাতে অকুস্থলে যান। যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন। ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো তাৎক্ষণিক মেনেও নেন। হয়তো অবরোধ উঠে যেত। আমাদের দুর্ভাগ্য, সরকার ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের প্রতিনিধি থাকে না। তারা প্রশাসনের পেশিশক্তি হয়ে যায়। না হলে এমন একটি ইস্যুতে জাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পাশে থাকার কথা ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, অবরোধ উঠাতে ছাত্রলীগ নাকি আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় এবং কোনো কোনো বন্ধুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। ছাত্ররা উপাচার্যের কাছে এর বিচারও চায়। এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় অবরোধ চলতে থাকে। পরে পুলিশি অ্যাকশন হয়। লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের পর রাবার বুলেটও ছোড়ে। বেশ কয়েকজন ছাত্র বুলেটবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃশ্যত ছাত্রদের প্রতিপক্ষ হয়ে পড়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেয়া হয়নি। পুলিশি অ্যাকশন রাজপথে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্যাম্পাসের ভেতরেও টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ সবের পর যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা তেমনটিই ঘটল। সরব আন্দোলন প্রশাসন বা ভিসিবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হল। এর শেষ পরিণতি ভিসি বাসভবনে বিক্ষোভ।
এ ধরনের সংকটে অতীতে ভিসি ও ভিসিপন্থী শিক্ষকরা ছাত্র বিক্ষোভ প্রশমনে যে ধরনের মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন এ ক্ষেত্রে তা হল না। ‘মব’ (Mob) তৈরি হলে তখন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তখনই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এর জন্য পুলিশ আর প্রিজনভ্যান ডেকে এনে ছাত্রছাত্রীদের গণগ্রেফতার করিয়ে আপসের সুযোগ না রেখে কোর্টে চালান দেয়ায় ভূমিকা রাখা নিশ্চয়ই প্রশাসনের একটি নিন্দনীয় রেকর্ড। আমরা মনে করি, পুরো বিষয়টি হয়তো কাঁচা চিন্তা এবং এক ধরনের ইগো থেকে হয়েছে অথবা কোনো পক্ষ সঙ্গোপনে উপাচার্য মহোদয়কে বিতর্কিত করার জন্য কুপরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এতে ঝড়ো বাতাস কি এড়ানো যাবে? গণগ্রেফতারের ক্ষত শিক্ষার্থীদের বুক থেকে সহজে শুকাবে না। আমি তো শুনেছি, ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কতটা উত্তপ্ত হয় কে জানে! গণগ্রেফতার করিয়ে যে ভুলটা করা হয়েছে তার কিছুটা শুধরে নেয়া যেত দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করে। অযথা জল ঘোলা করতে বাম-ডানের আওয়াজ না তুলে ক্যাম্পাসে পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করে ছাত্র, শিক্ষক আর প্রশাসনের মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে উপাচার্য আর তার ঘনিষ্ঠজনদের এখনই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা চাই না কোনো কারণে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হোক, বিঘ্নিত হোক শিক্ষার পরিবেশ।
এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shahnaway7b@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.